সেমিফাইনালে কিউইদের হঠিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্থান

সেমিফাইনালে কিউইদের হঠিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্থান

স্রেফ সৌভাগ্যক্রমে বিশ্বকাপের সেমিতে সুযোগ পেয়েছিল পাকিস্থান। তারাই কীনা এখন ফাইনালে! বড় টুর্ণামেন্টে সেমিফাইনালের দল নিউজিল্যান্ড শেষ পর্যন্ত সেখানেই আটকে রইল।

এবারের বিশ্বকাপে দলীয় শক্তির বিবেচনায় অন্যতম ব্যালেন্সড দল হিসাবেই ছিল নিউজিল্যান্ড। ব্যাটিংয়ে যেমন ক্লাসিক ব্যাটাররা আছে, তেমনি পাওয়ার হিটারেরও অভাব নেই। বোলিংয়ে সমকালীন বিশ্বে সমীহ জাগানিয়া বোলাররা নেতৃত্বে। ফিল্ডিংয়েও ভীষণ ক্ষীপ্র।

প্রথম খেলায় নিউজিল্যান্ডের কাছে বিশাল ব্যবধানে হেরে গিয়ে অষ্ট্রেলিয়ার নেট রান রেটের যে ক্ষতি হয়েছিল, সেটা তারা আর পুষিয়ে উঠাতে পারে নাই। তাই নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের সমান পয়েন্ট পেয়েও দুর্বল রান রেটের কারনে আশাহত হতে হয় স্বাগতিক অষ্ট্রেলিয়াকে।

গতানুগতিকভাবে খেলে সব ম্যাচে যে সুবিধা করা যায় না সেটা আজ প্রমাণ করল নিউজিল্যান্ড। সেমিফাইনালের মত একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের মাঝামাঝি কোন রিস্কি শটে যায়নি তারা। তাই হাতে উইকেট রেখেও ১৫২ রানে থেমে যাওয়াটা নিরাপদ ছিল না মোটেও। 

ওপেনার ফিন অ্যালেন ইনিংসের তৃতীয় বলে শাহিন আফ্রিদির বলে লেগ বিফোর উইকেট হলে নিউজিল্যান্ড ঢুকে যায় শামুকের খোলের ভিতর। ওয়ানডে ষ্টাইলে ব্যাটিং শুরু করেন ওয়ানডাউনে নামা অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন এবং অন্য ওপেনার কনওয়ে। ২০ বল খেলে এর চেয়ে একরান বেশি করেছেন কনোয়ে তিনটি বাউন্ডারিসহ। ফিরেছেন রান আউটের খাড়ায় কাটা পড়ে।

দলীয় রানের সাথে আরও ১২ রান যোগ হওয়ার পর আউট হয়ে যান চার নাম্বার নামা ইনফর্ম গ্লেন ফিলিপস। তিনিও একদিনের ব্যাটিং ধাঁচে খেলে ৮ বলে করেছেন ৬ রান। পাঁচ নাম্বারে নেমে গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের নায়ক গ্লেন ফিলিপস টি২০ সুলভ ব্যাটিংয়ের স্বাক্ষর রেখে ৩৫ বলে দ্রুত ৫৩ রান তুলেন। তিনটি চার ও একটি ছক্কা ছিল তার ইনিংসে।

অন্য প্রান্ত নিশাম করেন ১২ বলে ১৬ রান। মাত্র একটি চার ছিল তার এই ইনিংসে।

নিশামের পর ব্যাটিং লাইনে স্যান্টারের মত পাওয়ার হিটার থাকতেও বিগ শটের চেষ্টা খুব একটা করেননি দুই কিউই ফিনিশার।

আরও পড়ুন: ইনিংসের শেষ পর্যন্ত ব্যাট করে পাকিস্থানকে জেতালেন বাবর আজম

তবে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন একপ্রান্ত ধরে রেখে অ্যাংকরের ভূমিকা পালন করলেও মোটা দাগে নিউজিল্যান্ডের বড় একটা লাভ হয়নি। ৪২ বলে ৪৬ রানের ইনিংস টি-২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে দলের জয়ের জন্য সাহায্য করার পরিবর্তে ক্ষতিই করেছে বেশি। মাত্র একটি করে চার ও ছক্কা মেরেছেন উইলিয়ামসন।

নিউজিল্যান্ডের বোলিং লাইন আপ অবশ্য ১৫৩ রানের টার্গেটে ভাল লড়াই করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। তবে পাকিস্থানের ওপেনিং জুটির দুই বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজোয়ান তাদের পুরনো ফর্মে ফিরে যাবার ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বোলারদের কোন সুযোগই দেননি।

পাওয়ার প্লেতে রান তুলেছেন ওভারপ্রতি দশ রানের কাছাকাছি। মেপে মেপে যেমন খেলেছেন, তেমনি বিগ শটেও গিয়েছেন তারা। নিউজিল্যান্ডের দলীয় স্কোরে সর্বমোট চার যেখানে ১০টি, সেখানে পাকিস্থানের দুই ওপেনিং ব্যাটার মেরেছেন ১২টি।

প্রথম উইকেটের দেখা পেতে নিউজিল্যান্ডকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ত্রয়োদশ ওভার পর্যন্ত। পাকিস্থানের রান তখন একশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। বাবর আজম ফিরে আসেন ৫৩ রানে। ৪২ বলের মোকাবেলায়। ৭টি চারে সাজানো ছিল তার এই ইনিংস

ম্যাচ তখন প্রায় পাকিস্থানের পকেটে। মোহাম্মদ রিজওয়ানের সাথে ওয়ানডাউনে নেমে মোহাম্মদ হারিস খেলেছেন ২৬ বলে ৩০ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস। যদিও শেষ দিকে রিজোয়ান ও হারিস দুজনেই ফিরেছেন প্যাভিলয়নে। কিন্ত নিউজিল্যান্ডের ম্যাচে ফিরতে ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। টার্গেট ছোট, তাই পাকিস্থানের মিডল অর্ডারকে বড় কোন পরীক্ষা দিতে হয়নি।

উইকেট কীপার ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ রিজওয়ান খেলেছেন ৫৭ রানের ইনিংস। বল খেলেছেন ৪৩টি। পাঁচটি বাউন্ডারি মেরেছেন তার এই ইনিংসে। সপ্তদশওভারের শেষ বলে তিনি যখন বোল্টের বলে ফিরে আসেন তখন পাকিস্থান জয় থেকে মাত্র ২১ রানের দূরত্বে। নিউজিল্যান্ডের হয়ে বোলিংয়ে ট্রেন্ট বোল্ট ২ উইকেট পেয়েছেন ঠিকই, ওভারপ্রতি খরচ করেছেন ৮.২৫ রান। বাকি বোলাররাও তেমন কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি বিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের উপরে।

আরও পড়ুন: বেন ষ্টোকসের দুর্দান্ত নৈপূণ্যে শ্রীলংকাকে হারিয়ে সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড

তবে পাকিস্থানী বোলাররা ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়েছেন ঠিকই। পাকিস্থানের পেসারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের কারনেই ডেথওভারে রান বাড়িয়ে নিতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। আফ্রদী ২৪ খরচায় নিয়েছেন দুই উইকেট। পাকিস্থানের কোন বোলারকেই টার্গেটে পরিণত করতে পারেনি কিউইরা। গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচে ভারত যেমন টার্গেট করেছিল মোহাম্মদ নওয়াজকে। নিউজিল্যান্ডও পাকিস্থানের পঞ্চম বোলারের পজিশনে থাকা নওয়াজ ও ওয়াসিমকে  টার্গেট বানাতে পারত বিগ শটের জন্য।

 গেম প্ল্যান হয়তো মাঠে এলেমেলো হয়ে গিয়েছিল তাদের। তাই বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল থেকেই প্রতিদ্বন্দিতাহীন অনেকটা  এলেমেলোভাবেই বিদায় নিতে হল নিউজিল্যান্ডকে।

Related posts

Leave a Comment