বেন ষ্টোকস আবারও ইংল্যান্ডের ত্রাণকর্তা! গ্রুপ পর্যায়ের শেষ ম্যাচে বেন ষ্টোকসের অলরাউন্ড নৈপূন্যে শ্রীলংকাকে পরাভূত করে সেমিফাইনালে উন্নীত হল ইংল্যান্ড।
খেলায় জিতলেও শ্রীলংকার সম্ভাবনা ছিল না নকআউট পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার। তবে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে গ্রুপ পর্যায়ে আরও দুই পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকায় গ্রুপের তৃতীয় স্থানে থাকতে পারার সান্তনা পাওয়া যেত।
টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নিতে দ্বিধা করেননি শ্রীলংকান অধিনায়ক দাসুন শানাকা। বড় স্কোর গড়ে ইংল্যান্ডকে পরবর্তীতে স্পিন দিয়ে ঘায়েল করার পরিকল্পনা ছিল নিশ্চয়ই। আর স্পিনে ইংল্যান্ডের দুর্বলতার দিকটি খুবই স্পষ্ঠ।
শুরুটাও দারুন ছিল শ্রীলংকার। ইংল্যান্ডের পেস আক্রমনের বিপক্ষে বেশ সপ্রতিভ ব্যাটিং করেন দুই ওপেনার। বিশেষ করে পাথুম নিশাংকা ছিলেন বেশ আক্রমণাত্মক। পাওয়ার প্লের ফিল্ডিং রেষ্ট্রিকশনের সুবিধা নেন পুরোপুরি।
ইংল্যান্ডের হয়ে বোলিংয়ের সূচনা করেন বেন ষ্টোকস। প্রথম ওভারে একটি ছক্কাসমেত দুই ওপেনার তুলে নেন ৯ রান। দ্বিতীয় ওভারে অলরাউন্ডার ওকস দেন ৬ রান। তবে তৃতীয় ওভারে ইংল্যান্ডের মুল ষ্ট্রাইক বোলার মার্ক উডস পড়েন তোপের মুখে। ক্রিজে থাকা দুই ব্যাটসম্যানই ছক্কা হাকান এই ওভারে। রান দেন ১৭।
ইনিংসের চতুর্থ এবং নিজের দ্বিতীয় ওভারেই সাফল্যের মুখ দেখেন অলরাউন্ডার ক্রিস ওকস। এই ওভারেই শেষ বলে লিভিংষ্টোনের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন কুশল মেন্ডিস।
তবে উইকেট পড়ে গেলেও ওপেনার নিশাংকা দমে যাননি। স্যাম কারেনের করা পঞ্চম ওভার থেকে নেন ১৩ রান। এপর্যায়ে পেস বোলারদের নিয়ে যখন কাজ হচ্ছিল না তখন স্পিনারদের আক্রমনে নিয়ে আসেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক বাটলার। যদিও পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে ইনফর্ম লংকান ব্যাটারদের সামনে স্পিনার নিয়ে আসাটা ছিল কিছুটা ঝুকিপূর্ণ।
আদিল রশিদ নিজের চারওভার বোলিং কোটায় রান দেন মাত্র ১৬। ওভারপ্রতি চার রান করে। সাথে নিয়েছেন লংকার সর্বোচ্চ স্কোরার পাথুম নিশান্কার উইকেট। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে তার এই কার্যকরী বোলিংয়ের জন্যই শেষ পর্যন্ত প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ পুরষ্কারটি লাভ করেন। যদিও এই ম্যাচে হেইলস, বাটলার এবং বেন ষ্টোকসেরও যথেষ্ট অবদান আছে ইংল্যান্ডের জয়ে।
কিন্তু আদিল রশিদকে নিয়ে আসাটা সম্পূর্ন কাজে লেগে যায়। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে বোলিং করতে এসে মাত্র দুইরান দেন আদিল। ম্যাচে ইংল্যান্ড শ্রীলংকার রান রেট কিছুটা চেপে ধরার সুযোগ পায়। কারন ওভারপ্রতি দশের কাছাকাছি রান নিচ্ছিলেন লংকান ব্যাটাররা।
ইংল্যান্ড স্কোয়াডে অবশ্য বোলিংয়ে যথেষ্ট বৈচিত্র্য ছিল। চার পেসারের সাথে তিন স্পিনার। সাত বোলারকেই ব্যবহার করেছেন অধিনায়ক। সেজন্যই শুরুর দিকে শ্রীলংকা এগিয়ে থাকলেও একসময় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ চলে আসে ইংল্যান্ডের দিকে। সেটা এমনই ছিল যে হাতে ৬ উইকেট নিয়েও শেষ ২৭ বলে শ্রীলংকা নিতে পেরেছে মাত্র ২৩ রান। যদি আরও ১০/১৫ রান বেশি নিতে পারত শ্রীলংকা তাহলে ম্যাচটি হয়তো তাদেরই হত।
শ্রীলংকান ওপেনার পাথুম নিশাংকা আরও কিছু সময় উইকেটে থাকলে হয়তো গল্পটি অন্যরকমই হতে পারতো। ষোলতম ওভারের মাঝামাঝি তিনি যখন আদিল রশিদের বলে ক্রিস জর্দানের (অতিরিক্ত ফিল্ডার) হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন, শ্রীলংকা তখন বড় স্কোরের চোখ রাঙ্গানি দিচ্ছে। ৪৫ বলে করেছেন ৬০ রান। যদিও রান ও বলের ব্যবধান শুরুর দিকে অনেক বেশি ছিল। পাঁচটি ছক্কার সাথে মেরেছেন দুটি চার। অন্যপ্রান্তে সমর্থন বেশি একটা না মেলায় আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে আউট হন নিশাংকা।
ইংল্যান্ডের ইনিংসে দুই ওপেনারই ম্যাচটি প্রায় অর্ধেক শেষ করে দিয়ে আসেন। ১৪১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে দুই বিধ্বংসী ওপেনার অ্যালেক্স হেইলস আর জস বাটলার মারকাটারী ব্যাটিংয়ের পসরা খুলে বসেন। শুরুতে হেইলস ছিলেন বেশি আক্রমণাত্মক। যদিও জস বাটলার প্রথম দিকে কিছুটা হিসাবী ব্যাটিং করেন।
প্রথম ওভারে দুই ওপেনার মিলে নেন তিন রান। তবে দ্বিতীয় ওভারে তারা নেন ১২ রান। উইকেটে সেট হয়ে যাবার পর পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে শ্রীলংকান ফাষ্টমিডিয়াম বোলার রাজিতার ওভার থেকে তারা তুলে নেন ২০ রান। ইংল্যান্ডের রান তখন ছয় ওভার শেষে বিনা উইকেটে ৭০ রান।
পাওয়ার প্লের পর শ্রীলংকান স্পিনাররা বল টার্ণ করাতে সক্ষম হন। ইংল্যান্ডের রান রেট স্লো হয়ে আসে। এই অবস্থা কাটাতে শ্রীলংকান স্পিনার হাসারাঙ্গাকে উইকেট দিয়ে ফিরে আসেন দুই ওপেনার। শুরুতে বাটলার ফিরে যান ২৩ বলে ৩০ রান করে রিটার্ণ ক্যাচ দিয়ে। একটি ছক্কা ও দুটি চার ছিল তার এই ইনিংসে।
হেইলস অবশ্য টিকে ছিলেন আরও দুই ওভার। হাফ সেঞ্চুরীর দোরগোড়ায় গিয়ে দশম ওভারের প্রথম বলে তিনিও ফিরে আসেন হাসারাঙ্গাকে উইকেট দিয়ে। হেইলসের আক্রমণাত্মক ৩০ বলে ৪৭ রানের ইনিংসে ছিল ৭টি চার ও একটি ছক্কার মার।
আরও পড়ূন: ইনিংসের শেষ পর্যন্ত ব্যাট করে পাকিস্থানকে জেতালেন বাবর আজম
দুই ওপেনারের বিদায়ের পর সাময়িকভাবে পথ হারায় ইংল্যান্ড। দ্রুত উইকেট পড়তে থাকে একপ্রান্তে। ওয়ানডাউনে নামা বেন ষ্টোকসের সৌজন্যে বড় ভরাডুবি থেকে বেঁচে যায় ইংল্যান্ড।
২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের নায়ক এখানেও ইংল্যান্ডকে টেনে তুলেন বিপদ থেকে।
টার্গেট রান সংখ্যা ছিল বলের থেকেও কম। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতেও বড় শট খেলার লোভ সামলাতে পারেননি ইংল্যান্ডের মিডল অর্ডার ব্যাটাররা। শুরু করেছিলেন হ্যারি ব্রুক। তাকে অনুসরন করেন লিয়াম লিভিংস্টোন, মইন আলী ও স্যাম কারেন। প্রত্যেকেই বল হাওয়ায় উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরে আসেন।
অভিজ্ঞ বেন ষ্টোকস বড় শট খেলার বিলাসিতায় মগ্ন হননি। ঠান্ডা মাথায় এক রান দুই রান করে নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। ইংল্যান্ডের ইনিংসের সর্বোচ্চ ৩৬ বল খেলেছেন বেন। শেষ পর্যন্ত ৪২ রানে অপরাজিত ছিলেন। বাউন্ডারি মেরেছেন মাত্র দুইটি।
শেষ ওভারে ইংল্যান্ডের জয়ের লক্ষ্য ছিল ৫ রানের। লাহিরুর করা প্রথম দুই বল থেকে ৩ রান নেন বেন ষ্টোকস। তৃতীয় বলে রান নিতে পারেননি অলরাউন্ডার ক্রিস ওকস। তবে চতুর্থ বলে বাউন্ডারি মেরে ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেন তিনি। একই সাথে চিরপ্রতিদ্বন্দী অষ্ট্রেলিয়ার বিদায় ঘন্টা বাজিয়ে দিয়ে ইংল্যান্ডের সেমি ফাইনাল নিশ্চিত করেন ওকস।
এ গ্রপের পয়েন্ট তালিকায় অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের পয়েন্ট ৫ ম্যাচ থেকে সমান ৭ পয়েন্ট করে। কিন্তু নেট রান রেটে এগিয়ে থাকায় নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড উন্নীত হয়েছে সেমি ফাইনালে।
বেন ষ্টোকসকে নিয়ে আমাদের ভিডিও দেখুন ইউটিউবে