মুশফিকুর রহিম অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ এক ক্রিকেটার

মুশফিকুর রহিম

মুশফিকুর রহিম বাংলাদেশের বদলে যাওয়া ক্রিকেটের অন্যতম এক পুরোধা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় দুই দশকের এক পুড় খাওয়া ক্রিকেটার। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের মোকাবেলায় শিখে নিয়েছেন নিজেকে শানিত করার কলা-কৌশল।

জাতীয় দলে মুশফিকুর রহিমের অভিষেক এমন একটি সময়ে যখন বাংলাদেশের ক্রিকেট বিদেশী দলগুলোর বিরুদ্ধে একটানা হারের লজ্জাজনক রেকর্ডের অধিকারী। বাংলাদেশের ক্রিকেটের পালাবদল যাদের হাত ধরে হয় মুশফিক তাদের মধ্যে অন্যতম।

উইকেট রক্ষক ব্যাটার হিসাবে মুশফিকের যখন সূচনা তখন এই পজিশনে বাংলাদেশের সেসময়ের সেরা খালেদ মাসুদ পাইলট শক্ত অবস্থানে। রিজার্ভ উইকেট কীপার কিংবা মিডল অর্ডার ব্যাটার হিসাবেই তাই দলে অন্তর্ভুক্তি মুশফিকের। ২০০৫ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিষেক ম্যাচে খেলেছেন ব্যাটসম্যান হিসেবেই। 

মুশফিকুর রহিম কেন বিখ্যাত?

মুশফিকুর রহিম বাংলাদেশের ক্রিকেটে মি: ডিপেন্ডেবল নামে পরিচিত। ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় জুড়ে ব্যাট করেছেন চার নাম্বার পজিশনে। এই পজিশনে সাধারনত দলের সেরা ব্যাটাররাই সুযোগ পান। স্কোরবোর্ডে যখন দ্রুত কয়েকটি উইকেট পড়ে যায় তখন দলের স্কোর মেরামত করতে হয় ঝুটি গড়ে। বড় স্কোরে না গিয়ে রান রোটেট করতে হয় এক/দুই রান নিয়ে। এসব কাজের জন্য প্রয়োজন স্কিল এবং সলিড টেকনিক। অনুশীলনে ঘন্টার ঘন্টা পরিশ্রম করে প্রয়োজনীয় স্কিল রপ্ত করেছেন মুশফিক। এর ফলও পেয়েছেন।

বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসাবে টেষ্ট ক্রিকেটে একাধিক ডবল সেঞ্চুরী করেছেন তিনি। এমনকি বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ডবল সেঞ্চুরীর রেকর্ডও তার দখলে। দীর্ঘ্য সময় উইকেট কিপিং করেও ব্যাটিংয়ে সব সময়ই পরিশ্রম, মেধা ও বুদ্ধিমত্তার স্বাক্ষর রাখেন তিনি।

অধিনায়ক হিসাবেও দীর্ঘ্যদিন বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। এই ভূমিকায় খেলে গড়েছেন কিছু অসাধারন রেকর্ড। টেষ্টে উইকেট রক্ষক এবং অধিনায়ক হিসাবে ২৮টি টেষ্টে নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বে দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসাবে এই তালিকায় নাম লেখিয়েছেন মুশফিক। ওয়ানডে ক্রিকেটে এই তালিকায় তিনি আছেন অষ্টম স্থানে।

উইকেট রক্ষক ব্যাটার হিসাবে সর্বোচ্চ রানের স্কোর গড়ার এক অনন্য রেকর্ডেও চতুর্থ স্থানে আছেন মুশফিকুর রহিম। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ২১৯ রানের এক অনবদ্য ইনিংস গড়ে এই রেকর্ডে স্থান পেয়েছেন তিনি। এছাড়া ২০০০ রান এবং ১০০ ডিসমিসালের তালিকায় বিশ্ব ক্রিকেটে মুশফিকের অবস্থান পঞ্চম স্থানে। 

মুশফিকুর রহিম কত টাকার মালিক?

মুশফিকুর রহিম বিসিবির তালিকাভূক্ত ক্রিকেটার হিসাবে কিছুদিন আগেও সবচেয়ে বেশী পারিশ্রমিক প্রাপ্ত খেলোয়াড় ছিলেন। সেসময়ে মুশফিকের মাসিক বেতন ছিল ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। নতুন চুক্তিতে অবশ্য সাকিব আল হাসান সর্বাধিক পারিশ্রমিক পাচ্ছেন বিসিবি থেকে। তিন ফরম্যাটেই খেলছেন সাকিব। মুশফিক অবশ্য টি-টুয়েন্টি থেকে বিদায় নিয়েছেন। খেলছেন টেষ্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেট।

একটি অসমর্থিত বিদেশী সূত্রের মূল্যায়ন অনুযায়ী, ২০২১ সালে মুশফিকুর রহিম ইউএস ৫ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৫৩ কোটি টাকার মালিক ছিলেন।

আরও পড়ুন: সাকিব আল হাসান কত টাকার মালিক?

মুশফিকুর রহিমের উচ্চতা কত ফুট?

মুশফিকুর রহিমের উচ্চতা নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি রয়েছে। অভিষেকের সময় মুশফিক ছিলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে খর্বকায় ক্রিকেটার। তবে মুমিনুল হক আসার পর মুশফিক এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে চলে যান।

একটি বাংলাদেশী ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, মুশফিকুর রহিমের প্রকৃত  উচ্চতা ৫ ফুট সাড়ে ৩ ইঞ্চি। যদিও উইকিপিডিয়া দেখাচ্ছে ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি। আবার কিছু সংবাদ মাধ্যম দেখাচ্ছে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। তবে বেশিরভাগ ওয়েবসূত্র অনুযায়ী মুশফিকের উচ্চতা পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি হিসাবেই পরিগণিত হচ্ছে।

মুশফিকুর রহিম শিক্ষা

মুশফিকুর রহিমের জন্ম বাংলাদেশের বগুড়া জেলায় ১৯৮৭ সালে। এখানেই তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়ালেখা করেছেন। বগুড়া জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে ভর্ত্তি হন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্টান বা বিকেএসপিতে।

পরবর্তীতে উচ্চতর পড়ালেখার জন্য মুশফিকুর রহিম বেছে নেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়কে। এখানে ইতিহাস বিভাগে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছেন প্রথম শ্রেনীতে।

মুশফিকুর রহিমের বউয়ের নাম

মুশফিকুর রহিম বিয়ে করেছেন ২০১৪ সালে। তার বউয়ের নাম জান্নাতুল কিফায়াত মন্ডি। সে সময়ে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর ছাত্রী ছিলেন মন্ডি। এই দম্পতির ঘরে এক ছেলে। নাম শাহরোজ রহিম মায়ান।

মুশফিকুর রহিম আত্মীয়তার দিক থেকে অলরাউন্ডার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সাথে ঘনিষ্ট। দুজনেই ভায়রা ভাই।  মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বউয়ের নাম জান্নাতুল কাওসার মিষ্টি। তিনি বড়। তার ছোট বোন জান্নাতুল কিফায়াত মন্ডি মুশফিকের স্ত্রী। রিয়াদের শ্যালিকাকে বিয়ে করেছেন মুশফিকুর রহিম। 

মুশফিকুর রহিমের অবসর

একজন প্রফেশনাল ক্রিকেটার হিসাবে মুশফিকুর রহিম এখনো ফিটনেস ধরে রেখেছেন। তার ক্রিকেটীয় ফর্মও আছে ভাল। তাই আরও কিছুদিন খেলা চালিয়ে যেতে পারবেন বলে ধরে নেয়া যায়।

টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে ষ্ট্রাইক রেট আশানুরুপ না হওয়ায় এবং পরিস্থিতির দাবি অনুযায়ী অবসর নিয়েছেন এই ফরম্যাট থেকে। বাকি দুই ফরম্যাটে এখনো মুশফিকুর রহিমের সমকক্ষ খেলোয়াড় খুব বেশি নেই বাংলাদেশে।

তবে ৩৬ বৎসর বয়সে এসে প্রাকৃতিক কারণেই ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে চলে এসেছেন মুশফিকুর রহিম। এ বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপ শেষে হয়তো অবসরে চলে যেতেন পারেন মুশফিকুর রহিম।

 তবে টেষ্ট ক্রিকেটে আরও কয়েক বছর খেলে যাওয়ার সুযোগ আছে তার। বর্তমান ফিটনেস ও ফর্ম ধরে রাখতে পারলে টেষ্ট ক্রিকেটে খেলে যাওয়াটা কোন সমস্যা হবে না বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম সেরা এই উইকেট রক্ষক ব্যাটারের।

Related posts

Leave a Comment