2023 ওয়ানডে বিশ্বকাপে ফিরছেন মাশরাফি

মাশরাফি

মাশরাফি বিন মোর্তাজা বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটি বড় অধ্যায়ের নাম। সমকালীন বাংলাদেশের ক্রিকেটের অনেকগুলো বড় সাফল্যের সাথেতার নাম জড়িত। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে সংহতি জোরদার করেছেন।

২০০০ সালে টেষ্ট ষ্ট্যাটাস লাভের পর বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক পালাবদল শুরু হয়। আন্তর্জাতিক ষ্ট্যান্ডার্ড অনুসরন করতে গিয়ে বাংলাদেশ দলে আসে অনেক পরিবর্তন।অভিজ্ঞ খেললোয়াড়দের অনেকেই এসময় বিদায় নিতে হয়। কারন তাদের ফিটনেসে ছিল অনেক ঘাটতি। 

তাই বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটি বড় শুন্যতা সৃষ্টি হয়। একের পর এক ম্যাচ হারতে থাকে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ম্যাচে বাংলাদেশের খেলা নিয়ে আশান্বিত হওয়ার কিছু ছিলনা। ৯৬ এর বিশ্বজয়ী শ্রীলংকান কোচ ডেভ হোয়াটমোরের তত্বাবধানে কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্রিকেট কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে।

সেসময়েই বাংলাদেশ দলে ক্যারিয়ারের সূচনা মাশরাফির। একজন পেসবোলিং অলরাউন্ডার হিসাবে মাঠে বাংলাদেশ দলের হয়ে ইনিংস শুরু করেছেন বোলিংয়ে।দলের ব্যার্থতায় রুখে দাঁড়িয়েছেন অনেক সময় ব্যাট হাতে। শুন্য দশকে বাংলাদেশ যখন মাঝে মাঝে একটি দুটিজয় পেতে শুরু করেতার বেশিরভাগ ম্যাচেই মাশরাফি ছিলেন অন্যতম কান্ডারি।

 ২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভারত দক্ষিন আফ্রিকাকে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করেছিল। দ্বিতীয়পর্বে উন্নীত হয়েছিল ভারতকে বিদায় করে দিয়ে। সেই বিশ্বকাপে একঝাক নবীন তারকার সন্ধান পেয়েছিল বাংলাদেশ। সাকিব, তামিম, মুশফিকুর। মাশরাফি এবং আশরাফুল অবশ্যতাদের আগেই তারকা খ্যাতিপেয়েছিলেন।

 

২০১১বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে খেলতে পারেননি মাশরাফি বিন মোর্তাজা কারনটা ছিল হাঁটুর ইনজুরি। যদিও কিছুটা ফিট ছিলেন। কিন্তু নির্বাচকরা নেননি তাকে। সেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাফল্য বলার মত কিছু ছিল না।

বাংলাদেশ দলকে মূলত বড় দলের পর্যায়ে নিয়ে আসেন মাশরাফি অধিনায়কত্ব পাবার পর। ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাফল্য ছিল এপর্যন্ত সবচেয়ে ভাল। কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে বিতর্কিত আম্পায়ারিংয়ের কারনে হেরে বিদায় নিতেহয় দুর্ভাগ্যজনকভাবে। নাহলে সেমিতে পৌঁছানো কঠিন ছিলনা।

আরও পড়ুন: হার্ডহিটার ব্যাটারের অভাবে হারল বাংলাদেশ

তবে ২০১৫ বিশ্বকাপের পরই মূলত: মাশরাফির নেতৃত্বে জেগে উঠে বাংলাদেশের ক্রিকেট। ঘরের মাঠে দ্বিজাতি সিরিজে একের পর একনাকাল করে ভারত, পাকিস্থান দক্ষিণ আফ্রিকাকে। পুরো বিশ্বকে চমকেদিয়ে এসব জয়ের কারনে বাংলাদেশ কিছুটা শ্রদ্ধা অর্জনে সমর্থ হয়। এর পুরো কৃতিত্ব মাশরাফিকে দেয়া যায়। কারন তার নেতৃত্ব গুনেই বাংলাদেশ ঘরের মাঠে এক অজেয় শক্তিতে পরিণত হয়।

 

২০১৯ বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের সাফল্য একদম কম ছিলনা।মাশরাফির নেতৃত্বে প্রতিটি ম্যাচেই ভাল লড়াই করেছে বাংলাদেশ। হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ওয়েষ্ট ইন্ডিজের মত দলকে। তবে মাশরাফির ব্যক্তিগত সাফল্য খুব একটা উজ্জল ছিলনা। তাই বিশ্বকাপ পরবর্তী শ্রীলংকা সফরে টি২০থেকে অবসর নেন মাশরাফি।ওয়ানডে ক্রিকেট থেক আনুষ্টানিক অবসরনা নিলেও দলে  নেই অনেক দিন থেকে।

এবারের টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ফলাফল খুবই বাজে। দলের মধ্য নেই কোন উদ্দীপনা।একের পর এক ম্যাচ হারছে বাংলাদেশ। নেতৃত্ব শুন্যতা প্রকট। দলের খেলোয়াড়দের মধ্য থেকে তাদের সেরাটা বের করে নেয়ার মত কেউ নেই।

 

মাশরাফি বিন মোর্তাজার বর্তমান বয়স ফর্ম বিবেচনায় দলে খেলোয়াড় হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হবার সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়। তবে ইদানিং বিভিন্ন জাতীয় দলে প্রাক্তন চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়দের বিভিন্ন ভূমিকায় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। কোচ, ম্যানেজার নির্বাচক হিসাবে অনেক বিখ্যাত ক্রিকেটারই কাজ করছেন। তবে বেশিরভাগই অবসর নেয়ার পর।

কিছুদিন আগেও পাকিস্থান দলে মিসবাহ উল হক খেলেছেন টেষ্ট দলে অনেকটা খেলোয়াড়কাম মেন্টর হিসাবে। অবসরের পরই অবশ্য কোচ হিসাবেও কাজ করেছেন পাকিস্থান জাতীয় দলে।

মহেন্দ্র সিং ধোনী ভারতীয় দলে সর্বকালের সেরা অধিনায়ক হিসাবে বিবেচিত হন। এখনও তিনি খেলার মধ্যে আছেন। তবে বয়স ফর্ম বিবেচনায় খেলোয়াড় হিসাবে তিনি সুযোগ পাননি চলতি বিশ্বকাপে। তবে তার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর জন্য ভারত তাকে দলে নিয়েছে মেন্টর হিসাবে। দলের খেলোয়াড়দের উদ্দীপ্ত করাই হবে তার কাজ।

 

২০২১সালের টি২০ বিশ্বকাপে সুযোগ পাননি মাশরাফি বিন মোর্তাজা দল থেকে নিজেকেপ্রত্যাহার করে নেন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। তবে একটি টিভি অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন তামিম ইকবার। বিভিন্ন খেলায় বাংলাদেশের সাফল্য ব্যর্থতার বিশ্লেষন করছেন।

তামিম ইকবাল বর্তমানে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক। তার অনুষ্টানে অতিথি হয়ে যোগ দিয়েছিলেন মাশরাফি বিন মোর্তাজা বাংলাদেশ দলের ক্রমাগত ব্যার্থতায় দুজনেই ব্যাথিত। অতীতের সফল অধিনায়ক  মাশরাফি বিন মোর্তাজা কে পেয়ে একটি অফার দিলেন তামিম।

২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলে মেন্টর হিসাবে থাকবেন কীনা মাশরাফির কাছে জানতে চাইলেন তামিম। 

যদি ক্রিকেট বোর্ড তামিমের প্রস্তাব মেনে নিয়ে মাশরাফিকে মেন্টর হিসাবে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানায় তাহলে মাশরাফি বিন মোর্তাজা রাজী হবেন কীনা জানতে চান তামিম। জবাবে মাশরাফি বলেন দেশের জন্যকিছু করার প্রস্তাব পেলে তিনি কখনোই ফিরিয়ে দিবেন না। তিনি সবসময়ই দেশের হয়ে কাজ করতে প্রস্তুত। অবশ্যই রাজী থাকবেন এধরনের প্রস্তাবে।

 

২০২৩ বিশ্বকাপ এখনও কিছুটা দূরে আছে। তবে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হিসাবে তামিম ইকবাল থাকবেন বলেই মনে হচ্ছে।কারন তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে লম্বা সময়ের জন্য। অধিনায়ক হিসাবে তামিম নিশ্চয়ই মাশরাফিকে রাখতে চাইবেন তার পাশে। দলেমেন্টর হিসাবে।

 

মাশরাফির অতীত সাফল্য, ব্যক্তিত্ব দৃঢ়চেতা মনোবলের জন্য বোর্ডও তাতে দ্বিমত পোষণ করবে বলে মনে হচ্ছেনা। তাই আগামী ২০২৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলে মেন্টর হিসাবে মাশরাফি বিন মোর্তাজার থাকাটা অনেকটাই নিশ্চিত।

Related posts

Leave a Comment