ভারত হেরে যাবার কারনে অনেক প্রশ্ন মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। এমন একপেশে হারের কারনে নানা বিষয় উঠে আসছে। ইংল্যান্ডের কাছে সেমিফাইনালে হেরে যাবার সম্ভাব্য কিছু কারন নীচে তুলে ধরা হল।
(1) : বোলারদের নিষ্প্রভ পারফরমেন্স
ভারতীয় দলের উদ্বোধনী বোলার ভূবনেশ্বর কুমার প্রথম বলটি শুরু করেন ওয়াইড দিয়ে। মর্নিং শো’জ দ্য ডে!
কোন কোন ম্যাচে প্রথম তিন বলের মধ্যেই উইকেট তুলে নিতে দেখা যায় ভারতীয় বোলারদের। প্রতিপক্ষ শিবিরে ভয় ঢুকিয়ে দেয়ার জন্য এটা অপরিহার্য। কিন্তু ভুবি শুরু করলেন ওয়াইড দিয়ে। নিজেদের নার্ভাসনেস প্রকাশ করলেন শুরুতেই।
(2): দুর্বল গেম ষ্ট্রাটেজী
ভারতীয় ইনিংসের গেম পরিকল্পনার মধ্যে বড় অংশ জুড়ে রয়েছে প্রথম তিন ব্যাটসম্যানদের একজনকে ইনিংস শেষ করে আসতে হবে। একপ্রান্ত আগলে রেখে তারা যত বেশি বল খেলবেন ততই লাভ। এ কারনে কোহলী সেট হয়ে যাবার পরও রিস্কি শট খেলেননি ইনিংসের মাঝামাঝি গিয়েও। শেষ পাঁচ ওভারে যতঠুকু রান করা যায় শেষ পরিকল্পনাতেই এগিয়েছেন। অথচ কোহলী শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক হলে প্রতিপক্ষ শিবিরে ভীতি তৈরি হতে পারত যার কারনে ভারতের স্কোর আরও অনেক বড় করে নেয়া সম্ভব ছিল।
আরও পড়ুন: ভারতকে বিধ্বস্ত করে ফাইনালে ইংল্যান্ড
(3) : ত্রুটিপূর্ণ দল নির্বাচন
ভারতীয় দল নির্বাচন সঠিক ছিল না বলেই সাবেক ক্রিএকটারদের অনেকেই মনে করছেন। এই ম্যাচে স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহালকে বসিয়ে অশ্বিন কে নেয়াটা সঠিক ছিল না। চাহাল অনেক বেশি কার্যকর হতে পারতেন। হয়তো অশ্বিনের ব্যাটিং সক্ষমতার জন্যই তাকে এগিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু বোলিং সক্ষমতার বিষয়টি ঠিকমত ভেবে দেখেননি টিম ম্যানেজমেন্ট। এছাড়া দীনেশ কার্তিকের জায়গায় রিষভ প্যান্টকে নেয়াটাও যুৎসই ছিল না। রিষভ আইপিএলে সাধারণত খেলেন টু ডাউনে। আর দীনেশ ব্যাট করেন ফিনিশারের ভূমিকায়। তাই ছয় নাম্বার পজিশনে রিষভের চেয়ে দীনেশই কার্যকর হতেন।
(8) : চাপে ভেঙ্গে পড়া
বড় ম্যাচের প্রেশারে ভারতীয় দলের খেলোয়াড়রা শুরুতেই নার্ভাস ছিলেন। দ্বিতীয় ওভারেই লোকেশ রাহুল আউট হয়ে ফিরে আসেন। কিন্ত দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ভারতের সেরা দুই ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলী ওয়ানডে ষ্টাইলে ব্যাটিং করেন। উইকেট যাতে না পড়ে সে দিকেই তারা বেশি মনোযোগী ছিলেন। রোহিত করেছেন ২৮ বলে ২৭ রান। এই সময় কোহলীর রান তোলার হারও ছিল কম। স্নায়ুচাপ নিয়ে ভাল স্কোর তৈরি করতে পারেননি সূর্য কুমার যাদব। অথচ এই বিশ্বকাপে তিনি সেরা ফর্মে ছিলেন। অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া আর বিরাট কোহলী শেষ ৩ ওভারে ৪৭ রান নিয়ে দলের স্কোর মোটামুটি লড়াই করার মত পর্যায়ে নিয়ে যান।
(5): ইংল্যান্ডের ওপেনারদের সেটেল হতে দেয়া
অন্যান্য ম্যাচের মত এদিন শুরুতেই উইকেট নিতে পারেননি ভারতীয় বোলাররা। তাই ইংলিশ ওপেনাররা উইকেটে সেট হওয়ার সুযোগ পেয়ে যান। এমনিতেই জস বাটলার আর অ্যালেক্স হেইলস ওপেনিংয়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান। তাই উইকেটে সেটেল হওয়ার সুযোগ পেয়ে অচিরেই খেলার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের মুঠোয় নিয়ে নেন। বিগ ম্যাচ প্রেশার নিতে না পেরে ভারতীয় বোলারদের মধ্যে কিছুটা আতংক ছিলই। সেটার পুরো ফায়দা তুলে নেন ইংল্যান্ডের উদ্বোধনী দুই ব্যাটার।
ভারতীয় দলের ক্রিকেটারদের চোখেমুখে আতংকের ছাপ ছিল পরিষ্কার। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ মোটেও আক্রমণাত্মক ছিল না। তাছাড়া উইকেট না পড়ায় তাদের হতাশা ঢেকে রাখার সুযোগও ছিল না। ইংল্যান্ডের উপরের সারির দুই তিন উইকেট তুলে নিতে পারলে কী হতে পারত সেটা শ্রীলংকা-ইংল্যান্ড ম্যাচেই দেখা গেছে।