প্রত্যাশিত দুই জয়ে চার পয়েন্ট: সেমিতে যাবার হাতছানি বাংলাদেশের সামনে

বাংলাদেশ

টি২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে দ্বিতীয় জয়ের মুখ দেখেছে বাংলাদেশ। তীব্র প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ ম্যাচে পুরনো প্রতিদ্বন্দী জিম্বাবুয়েকে ৩ রানে হারিয়ে সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রেখেছে টাইগাররা।

নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয় ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে হারের পর আজ বি গ্রুপের স্নায়ুক্ষয়ী এই ম্যাচকে ঘিরে সবার কৌতুহল ছিল। আগের ম্যাচে পাকিস্থানকে জিম্বাবুয়ে হারিয়ে দেয়াতে এই গ্রুপের সমীকরণ এখন জটিল হয়ে উঠেছে।

বৃষ্টির সৌজন্যে দক্ষিণ আফ্রিকার হাত থেকে অল্পের জন্য হার হতে রক্ষা পায় জিম্বাবুয়ে। বোনাস হিসাবে লাভ করে এক পয়েন্ট। যদিও এই ম্যাচে তাদের পয়েন্ট পাবার সম্ভাবনা ছিল না। ভাগ্যদেবী এর পরের ম্যাচেও জিম্বাবুয়েকে অভাবনীয় উপহার প্রদান করেন। লো স্কোরিং ম্যাচে জিম্বাবুয়ে এক রানে হারিয়ে দেয় এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট পাকিস্থানকে।

আজ বাংলাদেশকে কোন মতে হারাতে পারলে চলতি টি২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ে পৌঁছে যেত সেমির দোরগোড়ায়। তিন ম্যাচ শেষে পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে বি গ্রুপের শীর্ষে পৌঁছানোর সুযোগ ছিল তাদের। কারন জিম্বাবুয়ের পরের দুইটি ম্যাচ নেদারল্যান্ড ও ভারতের সাথে। বাংলাদেশের সাথে হেরে যাওয়াতে তাদের সেই আশা এখন কঠিন পরীক্ষার সামনে। যদিও পরের দুই ম্যাচ জিতে গেলে গাণিতিক সমীকরণে তাদের সামনেও এখনো বড় সুযোগ আছে।

একই ভাবে পরের দুইটি ম্যাচ জিতে গেলে বাংলাদেশের সামনেও বড় সুযোগ আছে সেমি ফাইনাল উন্নীত হওয়ার। যদিও বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দুইটি দলই ভীষণ শক্তিশালী। তবে টুয়েন্টি টুয়েন্টি ম্যাচে দলগুলোর মধ্যে শক্তির ফারাক খুব একটা ধর্তব্যের মধয়ে পড়ে না। সামান্য এদিক সেদিক হলেই যেকোন দল জিততে পারে নিজেদের দিনে। যেমনটি করে দেখিয়েছে বাংলাদেশের সাথে হেরে যাওয়া জিম্বাবুয়ে পাকিস্থানকে হারিয়ে দিয়ে। এখান থেকেই নিজেদের অণুপ্রেরণা পেতে পারে বাংলাদেশ।

এর আগে ২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়ে দিয়ে প্রথম রাউন্ড থেকেই তাদের ছিটকে দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই দলের সদস্য সাকিব আল হাসান এখন দলীয় অধিনায়ক। সুতরাং শেষ দুই ম্যাচ জিতে বাংলাদেশের সেমিতে যাবার সম্ভাবনা যে বেশ শক্ত সেটা ভালভাবেই বলা যায়। তাই নিজেদের সামর্থ্যের উপর বিশ্বাস রাখাটাই এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

১৯৯২ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে বৃষ্টি আইনে দক্ষিণ আফ্রিকাকে দূর্ভাগ্যক্রমে বিদায় নিতে হয়। তেমনি বৃষ্টির কারনে ইংল্যান্ডের সাথে পাকিস্থান হেরে যাওয়া থেকে রক্ষা পেয়ে কোনমতে সেমি ফাইনালে উন্নীত হয়েছিল। পরের ইতিহাস সবার জানা। ইমরান খানের নেতৃত্বে পাকিস্থান সেবার বিশ্বকাপ জিতে নেয়।

যদি বৃষ্টির কারনে বাংলাদেশের পরের দুটি ম্যাচের একটিও পরিত্যক্ত হয়, তবুও সেমির আশা থাকছে বাংলাদেশের সামনে। সামগ্রিক মূল্যায়নে বি গ্রুপ এখনো পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত। বাংলাদেশের সাথে যদি পাকিস্থান জিতে যায়, দক্ষিণ আফ্রিকার এখন যে ফর্ম তাতে কোন কিছু বলা যায় না। সুতরাং পাকিস্থানের পয়েন্ট হবে চার।

আরও পড়ুন: ইনিংসের শেষ পর্যন্ত ব্যাট করে পাকিস্থানকে জেতালেন বাবর আজম

যদি দক্ষিণ আফ্রিকা ভারত-পাকিস্থানকে হারিয়ে দেয় তাহলে শীর্ষ দল হিসাবে তারা কোয়ালিফাই করবে। দ্বিতীয় দল নির্ধারনের হিসাবে তখন অনেক সমীকরণ সামনে চলে আসবে।

বৃষ্টিই এখন এই টি-২০ বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে। বৃষ্টি আইনে কিছুটা ভাগ্যের সহায়তা পেয়ে এবং গ্রুপের পয়েন্ট টেবিলের জঠিল সমীকরণ মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত উজ্জীবিত থাকতেই পারে।

তবে মাঠে নিজেদের সামর্থ্যের প্রয়োগের মাধ্যমে ভাল খেলে প্রতিদ্বন্দীদের হারিয়ে দিয়ে সরাসরি সেমিফাইনালে খেলার আশা ধরে রাখাই সবচেয়ে বড় চ্যালেন্জ এখন বাংলাদেশের সামনে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারছেন না। নিজেদের স্বাভাবিক সামর্থ্য অতিক্রম করে ভাল পারফরমেন্সের মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে নিজেদের মেলে ধরার দিকেই ফোকাস দেয়া উচিত টাইগার বাহিনীর।

এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল একটি কিংবা দুটি জয়। তাও বাছাই পর্ব উত্তীর্ণ হওয়া দলগুলোর বিরুদ্ধে। ভাগ্যক্রমে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ বাছাইপর্ব থেকেই বাদ পড়ে গেছে। আয়ারল্যান্ডকেও মোকাবেলা করতে হয়নি। নেদারল্যান্ড এবং জিম্বাবুয়ে তুলনামুলক সহজ প্রতিপক্ষ ছিল বাংলাদেশের জন্য। সেটা তাদের হারিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছে।

তাই যেহেতু এবারের বিশ্বকাপের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়ে গেছে এখন হারানোর কিছুই নেই। বড় দুটি দলের বিপক্ষে নির্ভার হয়ে ভাল খেলে যাওয়াই লক্ষ্য হওয়া উচিত। চাপমুক্ত হয়ে নির্ভার ক্রিকেট খেলতে পারলে রিজাল্ট নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসাটা খুবই সম্ভব। কারন প্রতিপক্ষ থাকবে চাপের মুখে। তাই মোমেন্টাম নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসতে পারলে এবার সেমি ফাইনালের যে ঘ্রাণ পাচ্ছে বাংলাদেশ তার স্বাদ পরখ করে নেয়াটা অসম্ভব নয়।

Related posts

Leave a Comment