শেষ পর্যন্ত আইসিসির বহু আরাধ্য ভারত-পাকিস্থান ফাইনালের স্বপ্নকে গুড়িয়ে দিল ইংল্যান্ড। সেমিফাইনালে টুর্ণামেন্টের অন্যতম ফেভারিট ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে পাকিস্থানের বিরুদ্ধে ফাইনালে নাম লিখিয়ে নিল ইংল্যান্ড।
এবারের আইসিসি টি-২০ ছিল ঘটনাবহুল। গ্রুপ পর্ব থেকে দুই ফেভারিট অষ্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিদায়ে কিছুটা বিবর্ণ হয়ে পড়েছিল ইতিমধ্যেই। তবে চিরপ্রতিদ্বন্দী ভারত ও পাকিস্থান দুই দলই সেমিফাইনালে উঠায় আইসিসি অপেক্ষায় ছিল দুই দল ফাইনালে উঠলে এই প্রতিযোগিতার মধুরেণ সমাপয়েৎ ঘটবে। অর্থাৎ ফাইনালের ম্যাচ স্বত্বের অতিরিক্ত আয় থেকে ভাল বাণিজ্য হবে।
তবে এই প্রতিযোগিতার অন্যতম শক্তিশালী ইংল্যান্ড শেষ পর্যন্ত একতরফাভাবে ভারতকে হারিয়ে দিয়ে সব জল্পনার সমাপ্তি ঘটিয়ে দিয়েছে।
চলতি টি২০ প্রতিযোগিতার প্রথম সেমিফাইনালে গতানুগতিক ছকে ক্রিকেট খেলে আগেরদিনই ধরা খেয়েছে নিউজিল্যান্ড। আজ দ্বিতীয় ম্যাচেও একই ষ্ট্রাটেজী নিয়ে ভারত নিজেদের বিপদ ত্বরান্বিত করেছে।
যতঠুকু সম্ভব কম উইকেট খুইয়ে ১৫-১৬ ওভার পর্যন্ত ব্যাট করে শেষের ৪-৫ ওভারে ধুম ধাড়াক্কা ব্যাটিং করে সেটা পুষিয়ে নেয়ার কৌশল ছিল ভারতের। এই কৌশল কিছুটা কাজে দিয়েছে সন্দেহ নেই। কিন্তু সব সময় এই কৌশলে জয় পাওয়া সম্ভব নয় সেটা ম্যাচের পর টের পেয়েছে ভারত।
ভারতীয় ইনিংসের ১৬তম ওভার শেষেও রান ছিল ৩ উইকেটে ১১০। অর্থাৎ রান রেট ছিল ৬.৮৮। মাঝের ওভারগুলোতে ইংল্যান্ডের দুই স্পিনার লিয়াম ও আদিল বল করেছেন অনেকটাই। শুরু থেকে হিসাব করলে ৭ ওভার। আদিল তার ৪ ওভারের কোটায় রান দিয়েছেন ২০। এরমধ্যে ফিরিয়েছেন এই বিশ্বকাপে ভারতের মুল ভরসা হয়ে উঠা সূর্যকুমার যাদবকে।
অপরদিকে লিয়াম ৩ ওভার বল করে দিয়েছেন ২১ রান। ভারতের হাই প্রোফাইল মিডল অর্ডার ব্যাটিংলাইন আপ এই দুই স্পিনারকে ঠিক মত টার্গেট করতে পারেনি। যদিও আইপিএলে অবলীলায় তারা ছক্কা মারেন স্পিনারদের বলে।
উইকেটে কোহলীর সাথে হার্দিক পান্ডিয়া ছিলেন অনেকক্ষণ। তারপরও তারা শেষ পাঁচ ওভার আসা পর্যন্ত হাত খুলে শট খেলেননি। যদি এই দুই ব্যাটসম্যান আরেকটু আগে মারকাটারী ব্যাটিং করে দলীয় স্কোরকে আরও স্ফীত করতে পারতেন। কিন্তু তারা সাবধানী ব্যাটিং করেছেন।
১৬০-১৭০ রানের টার্গেট যে নিরাপদ নয় সেটা গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের সাথে ইংল্যান্ড টের পেয়েছিল। তাই একই রকম টার্গেট পেয়ে তারা হয়তো কিছুটা নির্ভার ব্যাটিং করতে পেরেছে।
আরও পড়ুন: সেমিফাইনালে কিউইদের হঠিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্থান
জস বাটলার আর অ্যালেক্স হেইলস যেভাবে ব্যাটিং করেছেন তাতে আজ অবশ্য ইংল্যান্ড যেকোন চ্যালেন্জই নিতে পারত। তবে পার্থক্য হল স্কোরবোর্ডে রান থাকলে বোলাররা কিছুটা ঝুঁকি নিতে পারেন উইকেট তুলে নেয়ার জন্য।
ভারতের বোলাররা অবশ্য চাপের মুখে ভেঙ্গে পড়েছেন। আজ প্রায় প্রত্যেকেই খেই হারিয়ে ফেলেছেন। অবশ্য বাটলার এবং হেইলস শুরু থেকেই হাত খুলে মেরেছেন।
প্রথমে বাটলার শুরু করলেও পরে হেইলস এসে ছাড়িয়ে যান তাকে। ৪৭ বলের ইনিংসে মেরেছেন ৭টি ছক্কা, চারটি চার। বাটলার অবশ্য ছক্কা মেরেছেন ৩টি। তবে চার মেরেছেন নয়টি। ইংল্যান্ডের ষ্ট্র্যাটেজী হয়তো সেটাই ছিল। বাটলার থাকবেন ইনিংসের লম্বা সময় ধরে। অন্যপ্রান্তে হেইলস কিংবা অন্যরা ঝুঁকি নিয়ে বড় শট খেলবেন।
জস বাটলার আর অ্যালেক্স হেইলস যেভাবে ব্যাটিং করেছেন তাতে আজ অবশ্য ইংল্যান্ড যেকোন চ্যালেন্জই নিতে পারত। তবে পার্থক্য হল স্কোরবোর্ডে রান থাকলে বোলাররা কিছুটা ঝুঁকি নিতে পারেন উইকেট তুলে নেয়ার জন্য।
শেষ পর্যন্ত দুইজনই অপরাজিত থাকায় অন্য কোন পন্থা অবলম্বনে যেতে হয়নি ইংল্যান্ডকে। তবে ফাইনালে পাকিস্থানের বিরুদ্ধে তারা কোন পন্থা অবলম্বন করে সেটাই দেখার বিষয়।
অষ্ট্রেলিয়ার কন্ডিশন ইংল্যান্ডের জন্য অনেকটা হোম কন্ডিশনের মতই। জেনুইন পেসবোলিংয়ের সাথে ইংল্যান্ডের আছে মিডিয়াম পেসার। নিয়মিত দুই স্পিনারও ভাল সার্ভিস দিচ্ছেন। ব্যাটসমানরাও পেস বোলিংয়ে স্বচ্ছন্দ। তবে পাকিস্থানের বোলিং লাইনআপ যথেষ্ট শক্তিশালী। পেস-স্পিন দুই বিভাগই যথেষ্ট শক্তিশালী।
তবে বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলাটা নার্ভের সাথে জড়িত। স্নায়ুচাপে যে দল কম ভুগবে, তারাই শেষ পর্যন্ত শিরোপার স্বাদ নিতে পারবে।