সেমিতে নিউজিল্যান্ড!! শেষ রক্ষা হলনা ভারতের!!!
সেমিতে নিউজিল্যান্ড ! শেষ পর্যন্ত যোগ্যতর দল হিসাবেই টি–২০ বিশ্বকাপের সেমিতে উঠল নিউজিল্যান্ড। স্পিন ত্রয়ীর ঘুর্ণিতে নিউজিল্যান্ডকে কুপোকাৎ করার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হল। ফলশ্রুতিতে ভারতকে হতাশায় ডুবিয়ে আফগানিস্থানের বিদায়ও নিশ্চিত হল চলতি বিশ্বকাপথেকে।
আফগানিস্থানকে ঘিরে ভারতের সেমিতে উঠার স্বপ্ন জীবিতছিল এতদিন। দুই নাম্বার গ্রুপে পয়েন্ট টেবিলে রান রেটের জঠিলহিসাব নিকাশে আফগানিস্থান নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দিলেই ভারতের সেমিতে পৌঁছার সম্ভাবনা জোরালো হয়ে উঠত। কারনশেষ ম্যাচে ভারতের সহজ প্রতিপক্ষ নামিবিয়াকেহারানোর পাশাপাশি রান রেট বাড়ানোওকঠিন কিছু ছিলনা তাদেরজন্য।
নিউজিল্যান্ডএকটি ব্যালেন্সড দল। অতীতে বিশ্বকাপের বেশিরভাগ প্রতিযোগিতায় সেমিফাইনালে খেলেছে নিউজিল্যান্ড। চলতি প্রতিযোগিতায় পাকিস্থানের কাছে পরাজিত হলেও ভারতকে হারিয়ে দেয় তারা। এরপর সেমিতে উত্তরণের সব হিসাব নিকাশ নিজেদের অনুকুলে রাখে কিউইরা। গ্রুপ পর্বের বাকি ম্যাচগুলোতে তারাপ্রতিদ্বন্দী দলগুলোকে হারিয়েছে যোগ্যতার ভিত্তিতেই।
আরবআমিরাতের উইকেট সাধারনত স্পিনারদের অনুকুলে থাকে। স্পিনে আফগানিস্থানের শক্তি দুর্দান্ত। মোহাম্মদ নবী, রশিদ খানআর মুজিবের সম্মিলিত ১২ ওভারের স্পিনআক্রমনে নাভিশ্বাস উঠে স্পিনে দুর্বলব্যাটসম্যানদের। কুলিয়ে উঠতে না পেরেউইকেটে স্পিনের বিরুদ্ধে হাঁসফাঁস করে।
শক্তিশালী স্পিন অ্যাটাক থাকায় টসে জিতলেই প্রথমেব্যাটিং বেছে নেয় আফগানিস্থান।এই ম্যাচেও তার ব্যত্যয় ঘটল না। টসে জিতে মোহাম্মদনবী নিউজিল্যান্ডকে বোলিংয়ে আমন্ত্রণ জানান। এই সিদ্ধান্তে নিশ্চয়ই খুশি হয়েছিলেন ষ্টেডিয়ামে উপস্থিত আফগান সমর্থকদের সাথে ভারতীয় সমর্থকরাও।
নিউজিল্যান্ডের পেস বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে অবশ্য আফগানিস্থানের ব্যাটসম্যানরা স্বচ্ছন্দ ছিলেন না কেউই। মিডল অর্ডারে নাজিবুল্লাহ জাদরান স্রোতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন শুধু।
ট্রেন্টবোল্ট, টিম সাউদি ওএডাম মিনের সাথে পেসবোলিং অলরাউন্ডার জিমি নিশামকেও দলে রাখে নিউজিল্যান্ড।
আরও পড়ুন:টি-২০ বিশ্বকাপের নতুন চ্যাম্পিয়ন অষ্ট্রেলিয়া
আফগানব্যাটারদের পেস বোলিংয়ে দুর্বলতাটাভালভাবেই এনালাইসিস করে খেলতে নামেন কিউইরা। তাদের ছোড়া শর্ট পিচ আর বাউন্সার সামলাতে গলদগর্ম হন আফগান ব্যাটাররা।পাওয়ার প্লে ওভারের মধ্যেই১৯ রানে ৩ উইকেটপড়ে যায় আফগানদের। প্রথমতিন ব্যাটারই দুইঅংকের ফিগারে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন।
অবশ্য আফগানদের লম্বা ব্যাটিং লাইনআপের মিডল অর্ডারের ব্যাটাররা দাঁড়িয়ে যান সাময়িক দূরাবস্থা কাঠিয়ে। শুরতে গুলবুদ্দিন নাইবকে নিয়ে নজিবুল্লাহ জাদরান৩৫ রানের একটি কার্যকর পার্টনাশীপ দাঁড় করান। কিউই স্পিনার অ্যাশ সোধীর বলে নজিবুল্লাহ জাদরান ১৫ রানে বোল্ড হয়েপ্যাভিলিয়নে ফেরেন।
উইকেটে আসেন আফগান অধিনায়ক নবী। জাদরানের সাথে গড়ে তুলেন পঞ্চাশোর্ধ রানের পার্রনারশীপ। ২০ বলে ১৪ রানের ইনিংসে নবী অনেকটা নিস্প্রভ ছিলেন। কিন্তু অপর প্রান্তে নজিবুল্লাহ জাদরান সপ্রতিভভাবে ব্যাট চালিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত ৪৮ বলে ৭৩ রানেআউট হন জাদরান। ৩টিবিশাল ছক্কার সাথে ৬টি চারমারেন তিনি।
নজিবুল্লাহ জাদরান আউট হবার পর আরও ১০ বল বাকি ছিল। সেখান থেকে মাত্র ৫রান নিতে পেরেছেন আফগানব্যাটাররা। নিউজিল্যান্ডের বোলারদের আটোসাটো বোলিংয়ে আফগানদের টোটাল শেষপর্যন্ত ১২৪ রানের বেশিহয়নি।
নিউজিল্যান্ডের জয়ের টার্গেট ১২৫ রান নাগালের মধ্যেই ছিল। ওভারপ্রতি ৬রানের টার্গেট ওয়ানডে ক্রিকেটেও তেমন কঠিন নয় আজকাল। তাই টি–২০হলেও ওয়ানডে ষ্টাইলে খেলে ম্যাচ বেরকরে নেন কিউইরা।
আফগান স্পিনার মুজিব ও রশিদকে নিয়েভয় ছিল কিউই ব্যাটারদের।তবে আফগান অধিনায়কের দল পরিচালনায় তেমন মুন্সিয়ানা ছিল না। শুরুতেমুজিবকে বোলিংয়ে আনলেও রশিদকে আনেন পাওয়ারপ্লের পর।ধারাভাষ্য়ে থাকা সাবেক উইন্ডিজ অধিনায়ক ড্যারেন সামি বলছিলেন রশিদকে পাওয়ারপ্লের মধ্যেই নিয়ে আসাটা উচিতছিল।
পক্ষান্তরে, কিউই ব্যাটসম্যানরা টার্গেট ছোটা হওয়ায় কোনরকম তাড়াহুড়া করেননি। প্রফেশনালভাবে ম্যাচ বের করে নেন তারা। ওপেনার গাপটিল শুরুতে নবী ও মুজিবকে ভালভাবেই মোকাবেলা করেন। অন্য অপেনার ড্যারেল মিশেল ছিলেন কিছুটা আক্রমনাত্মক। মুজিবকে বাউন্ডারির বাইরেও পাঠান কয়েকবার। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি আউট হন মুজিবের বলেই, ১৭ রানে।
ওয়ান ডাউনে নেমে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন একপ্রান্তধরে রাখার পাশাপাশি রানরেটও ধরে রাখেন। গাপটিলও কনওয়েকে নিয়ে বের করেনেন ম্যাচ। চাপের মধ্যেও কীভাবে ধীরস্থির ব্যাটিং করে লক্ষ্যে পৌঁছানোযায় তার এক অনুপমপ্রদর্শনী দেখান কেন উইলিয়ামসন।
৪২ বলে ঠান্ডা মাথায়৪০ রানে অপরাজিত ছিলেনকেন। আফগান স্পিনারদের ধীরে সুস্থে দেখেশুনে খেলে কোন রকম প্রাধান্য বিস্তার বা আতংক সৃষ্টিকরতে দেননি উইলিয়ামসন। অন্যপ্রান্তে কনওয়ে অপরাজিত ছিলেন ৩২ বলে ৩৬রানে। চারটি চার মেরেছেন কন, কেন ৩টি। শুরুতে গাপটিল মেরেছেন ৪টি চার, ডেরেল৩টি।
কোন রকম ঝুঁকি নেননি নিউজিল্যান্ডের ব্যাটাররা। তাই কোন ছক্কা নেই তাদের ইনিংসে।
সেমিতে নিউজিল্যান্ড মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ডের । পাকিস্থান খেলবে অষ্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে।