শচীন টেন্ডুলকার। প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটারকে অনেকেই সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের একজন বলে মনে করেন। টেন্ডুলকারের অসাধারণ রেকর্ড এবং কৃতিত্ব তাকে ক্রিকেট বিশ্বে প্রচুর জনপ্রিয়তা এবং সম্মান এনে দিয়েছে।
এই নিবন্ধে টেন্ডুলকারের সেরা কিছু অর্জন সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণী প্রদান করার একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
প্রাথমিক কেরিয়ার এবং ব্রেকথ্রু ইনিংস
শচীন টেন্ডুলকার 1989 সালে 16 বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেন এবং ব্যাটসম্যান হিসাবে ব্যতিক্রমী দক্ষতা প্রদর্শন করে দ্রুত নিজেকে একজন অসাধারণ ব্যক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
তিনি 1990 সালে 17 বছর বয়সে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তার প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি রেকর্ড করেছিলেন, ব্যাটসম্যান হিসাবে তার অমিত সম্ভাবনার ইংগিত দিয়েছিলেন।
1991-92 অস্ট্রেলিয়া সফরে, টেন্ডুলকার সিডনিতে 148 রান এবং পার্থে 114 রান করেছিলেন, একটি শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে তার ব্যাটিং দক্ষতা প্রদর্শন করেছিলেন।
1996 বিশ্বকাপে টেন্ডুলকারের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স তাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং প্রশংসা এনে দিয়েছিল। তিনি ভারতের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, টুর্নামেন্টে 523 রান করেছিলেন, যার মধ্যে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে অপরাজিত 137 রান ছিল।
একই বছরে, তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকান, এই কৃতিত্ব অর্জনকারী সেই সময়ে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় ছিলেন।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি 1998 এবং ’99 এর গ্রীষ্ম
1998 সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে টেন্ডুলকার ছিলেন অসাধারণ পারফরমার, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল এবং ফাইনালে ব্যাক-টু-ব্যাক সেঞ্চুরি করেছিলেন।টুর্নামেন্টে ভারতের জয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান তাকে ব্যাপক প্রশংসা এনে দিয়েছিল। 1999 বিশ্বকাপে, কেনিয়ার বিরুদ্ধে টেন্ডুলকার একটি সেঞ্চুরি করেছিলেন, যা ভারতকে সুপার সিক্সে নিয়ে যায়।
2001 অস্ট্রেলিয়া সফর এবং শারজাহ কাপ জয়
2001 সালের অস্ট্রেলিয়া সফরে টেন্ডুলকারের পারফরম্যান্স ক্রিকেট ইতিহাসের একটি উজ্জ্বল অধ্যায়। বিশেষ করে সিডনিতে তার অসাধারন 241* রানের ইনিংসটি ক্রিকেটপ্রেমীরা সহজে বিস্মৃত হবেন না।
তিনি শারজাহ কাপেও 1998 এবং 2001 সংস্করণে দুটি সেঞ্চুরি করেছিলেন।
উভয় টুর্নামেন্টেই টেন্ডুলকারের অসাধারণ ফর্ম তাকে উভয় অনুষ্ঠানেই সিরিজ সেরার পুরস্কার জিতেছে।
ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজ 2002 এবং 2007-08
টেন্ডুলকার ইংল্যান্ডে তার ক্লাস প্রদর্শন করেছিলেন, বেশ কিছু স্মরণীয় ইনিংস তৈরি করেছিলেন, বিশেষত 2002 সালে হেডিংলিতে তার অপরাজিত 193 রান।
লিটল মাস্টার 2007-08 সিরিজে ইংল্যান্ডের উপর তার আধিপত্য অব্যাহত রাখেন, ট্রেন্ট ব্রিজে ভারতের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ 91 রান করেন।
2003 বিশ্বকাপের ফাইনাল এবং ধারাবাহিক নৈপূণ্য
2003 বিশ্বকাপে টেন্ডুলকারের অবদান অবিস্মরণীয় রয়ে গেছে, বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফাইনালে, যেখানে তিনি আউট হওয়ার আগে 90 রান করেছিলেন।
টেস্ট এবং ওডিআই ক্রিকেটে টেন্ডুলকার তার ধারাবাহিক পারফরম্যান্স অব্যাহত রাখেন, পরের বছরগুলিতে বেশ কয়েকটি সেঞ্চুরি এবং হাফ সেঞ্চুরি করেন।
2008 কমনওয়েলথ ব্যাংক সিরিজ এবং ডবল সেঞ্চুরী
2008 সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে অপরাজিত 200 রানের ঐতিহাসিক নক দিয়ে ওডিআই ক্রিকেটে শচীন টেন্ডুলকার প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি রেকর্ড করেন।
একই বছরে তিনি বাংলাদেশের বিপক্ষে আরেকটি ডাবল সেঞ্চুরি করেন, যা ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন হিসেবে তার মর্যাদা নিশ্চিত করে।
অস্ট্রেলিয়ায় কমনওয়েলথ ব্যাংক সিরিজে টেন্ডুলকারের অসাধারণ পারফরম্যান্স তাকে সিরিজের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার এনে দিয়েছে।
রেকর্ড ভাঙা ইনিংস এবং অবসর
টেন্ডুলকারের ঐতিহাসিক সেঞ্চুরি – আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে 100তম – 2012 সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে এসেছিল। তিনি 2013 সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তার 200তম টেস্ট ম্যাচ খেলেন, একটি গৌরবময় 24 বছরের ক্যারিয়ারের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন।
অবসর-পরবর্তী ক্যারিয়ার এবং উত্তরাধিকার
পেশাদার ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর,শচীন টেন্ডুলকার একজন পরামর্শদাতা এবং ধারাভাষ্যকার হিসেবে খেলাধুলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। আইপিএলে তিনি মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। সামগ্রিকভাবে ক্রিকেট খেলা উচ্চাকাঙ্ক্ষী তরুণ খেলোয়াড়দের নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।
আরও পড়ুন: অধিনায়ক এম এস ধোনীর ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বের রহস্য
উপসংহার
শচীন টেন্ডুলকারের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার একজন ক্রিকেট কিংবদন্তি এবং একজন সত্যিকারের মাস্টার ব্লাস্টার হিসেবে তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ। ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার অবদান অপরিসীম, যা তাকে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের একজন করে তুলেছে। তার সেরা ইনিংস, রেকর্ড এবং উত্তরাধিকার বিশ্বব্যাপী উচ্চাকাঙ্ক্ষী ক্রিকেটারদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে আছে।
শচীন টেন্ডুলকারের কিছু উল্লেখযোগ্য দিক:
শচীন টেন্ডুলকার তার ক্যারিয়ারে 100টি আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি করেছিলেন।
টেন্ডুলকার তার ক্যারিয়ারে ভারতের হয়ে ৬৬৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন।
বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে টেন্ডুলকারের সর্বোচ্চ স্কোর ২৪৮ অপরাজিত।
টেন্ডুলকার ২০১৩ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন।
আধুনিক দিনের ক্রিকেটে টেন্ডুলকারের অবদানের মধ্যে রয়েছে তার মেন্টরশিপ, ধারাভাষ্য এবং ভারতীয় ক্রিকেট দলের উন্নয়নের জন্য অব্যাহত সমর্থন। আইপিএলে তিনি মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন।