শ্রীলংকা শেষ পর্যন্ত এশিয়া কাপ টি-২০ আসরে নিজেদের শেষ্ঠত্ব প্রমাণ করল । প্রথম ম্যাচে বিশ্রীভাবে আফগানিস্থানের কাছে পরাজয়ের পর তারা ঘুরে দাঁড়ায় দারুনভাবে। একে কে বাকি সব প্রতিদ্বন্দীকে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তুলে নিল শ্রীলংকা।
ফাইনালে টস জয়ী পাকিস্থানের অধিনায়ক বাবর আজম শ্রীলংকাকে ব্যাটিংয়ে পাঠান। অধিনায়কের এই সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করে শুরুতেই উইকেট পেয়ে যান পাকিস্থানের বোলাররা। ইনিংসের তৃতীয় বলে নাসিম শাহের দুর্দান্ত বোলিংয়ে হার মেনে আউট হন ওপেনার কুশল মেন্ডিস। দলীয় রান ছিল তিন।
তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে আউট হন অন্য ওপেনার নিশাংকা। অধিনায়ক বাবর আজমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে আসেন অলরাউন্ডার হারিস রৌফের বলে। ১১ বলে আউট রান করেন একটি চার সহকারে।
এরপর পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে হারিস রৌফের পেস বোলিংয়ে খেই হারিয়ে বোল্ড আউট হয়ে শ্রীলংকার বিপদ ঘনিয়ে আনেন গুণাতিলকা। চার বলে তিনি করেন মাত্র এক রান। শ্রীলংকার দলীয় রান ৩৬।
কঠিন বিপর্যয়েও পাল্টা আক্রমণকেই রক্ষনের হাতিয়ার হিসাবে নেন শ্রীলংকার ব্যাটাররা। ধনন্জয়া আর রাজাপাক্সে মিলে ঘুরে দাঁড়ান দারুনভাবে। দলীয় ৫৩ রানে ধনন্জয়া আউট হলে সাময়িক বিপর্যয়ে পড়ে শ্রীলংকা। কিন্তু ২১ বলে চারটি চারসহ ২৮ রান করে শ্রীলংকাকে পথ দেখান ধনন্জয়া।
হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান শানাকা অলরাউন্ডার শাদাব খানের বলে বোল্ড হলে শ্রীলংকা পরিণত হয় ৫ উইকেটে ৫৮ রানে। এই অবস্থায় শ্রীলংকা কতদূর যেতে পারে সেটাই ছিল দেখার বিষয়।
সেখান থেকে পাল্টা আক্রমনে গিয়ে শ্রীলংকান লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার হাসারাঙ্গা পাওয়ার হিটিংয়ে ২১ বলে তুলে নেন ৩৬ রান। রাজাপাক্সে অনেকটা অ্যাংকর হিসাবে অন্যপাশে সাপোর্ট দেন হাসারাঙ্গাকে। একটি ছক্কা ও পাঁচটি চারের মারে হাসারাঙ্গা ফাইনাল ম্যাচ থেকে পাকিস্থানকে অনেকটাই ছিটকে দেন।
তবে শ্রীলংকান ইনিংসে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাজাপক্সের ৭১ রানের ইনিংসের। ৪৫ বলের এই ইনিংসে রাজাপাক্সে মারেন ছয়টি চার ও ৩টি ছক্কা। অন্যপ্রান্তে চামিকা করেন ১৪ বলে ১৪ রান।
পাকিস্থানী ফিল্ডাররা বাজে ফিল্ডিংয়ের প্রতিযোগিতায় নামলে শ্রীলংকা অনেকগুলো বোনাস রান লাভ করে। এমনকি বাউন্ডারী লাইনে ক্যাচ নিতে গিয়ে দুই ফিল্ডারের ধাক্কাধাক্কিতে ক্যাচ ফসকে গিয়ে সেটি ছক্কায় পরিণত হয়।
পাকিস্থানী পেস বোলাররা অনেকটা আগুণ ঝরান দ্রুত গতির বোলিংয়ের প্রদর্শনী দেখিয়ে। তাদের গতির কাছে বারবার পরাস্ত হন শ্রীলংকান ব্যাটাররা। হারিস রৌফ ২৯ রানে নেন ৩ উইকেট।
আরও পড়ুন: শূন্য,শূন্য এবং শূন্যর পর মারভান আতাপাত্তুর রুদ্রমূর্তি
১৭১ রানের টার্গেটে নেমে শুরুতে পাকিস্থানী ব্যাটাররা দেখেশুনে খেলা শুরু করেন। প্রথম ধাক্কা আসে ২২ রানের মাথায়। পাকিস্থানের অধিনায়ক ও সেরা ব্যাটার বাবর আজম ৫ রানে আউট হলে। পরের বলে ফখর জামানও ফিরে আসেন প্যাভিলিয়নে। শ্রীলংকান বোলার লিয়ানাগেমাগের এই সাফল্যের পরও শ্রীলংকান আক্রমনকে রুখে দিয়ে ওপেনার রিজোয়ান ইফতেখার আহমদকে ৭১ রানের পার্টনারশীপ গড়ে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন পাকিস্থানকে।
কিন্তু দুই সেট ব্যাটসম্যান থাকা সত্বেও রান রেট ছিল কিছুটা কম। শুরুতে ওভারপ্রতি আস্কিংরেট সাড়ে আট থাকলেও এসময়ে রান রেট বাড়ানোর চাপে পড়ে পাকিস্থান। বিশেষ করে ইফতেখার আহমদ ৩২ রান করলেও বল খরচ করেছেন ৩১টি। ওয়ানডে ষ্টাইলের এই ব্যাটিংই বিপদ ডেকে এনেছে তার দলের জন্য।
আরও পড়ুন: শ্রীলংকায় চার জাতি কাপেও ব্যর্থ বাংলাদেশ : ফুটবলে উন্নতির কোন ছাপ নেই
সেটা যখন ইফতেখার উপলব্ধি করেছেন ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। ছক্কা মারার চেষ্টায় লিয়ানাগেমাগের বলে বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েন তিনি। এরপরই ম্যাচে খেই হারায় পাকিস্থান। বাকি ব্যাটাররা শ্রীলংকান স্লো বোলারদের বাউন্ডারি লাইনের বাইরে উড়িয়ে মারতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দেন।
বেশি রক্ষণাত্মক হতে গিয়েই আসলে ব্যাকফুটে চলে যায় পাকিস্থান। উইকেটকীপার ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ রিজওয়ান ওপেনিংয়ে নেমে ৪৯ বলে করেন ৫৫ রান। মাত্র ৪টি চার আর একটি ছয়ের এই ইনিংসে পাকিস্থানের লাভ না ক্ষতির কারণ হয়েছে সেটি বিবেচ্য। টি-২০ ম্যাচের প্রায় অর্ধেক সংখ্যক বলে খেলে এ রকম স্কোর গড়লে অন্য প্রান্তের ব্যাটারদের উপর চাপ বাড়ে।
শ্রীলংকার রাজাপাক্সে যেখানে ৪৫ বলে করেছেন ৭১ রান। সেখানে রিজওয়ানের ৪৯ বলে ৫৫ রানে অনেকটা ব্যবধান হয়ে গেছে দুই দলের মধ্যে। এরকম কিছু ব্যবধান আর বাজে ফিল্ডিংয়ে পাকিস্থানের পরাজয় অবধারিত হয়ে যায়।
শ্রীলংকার বোলারদের মধ্যে লিয়ানাগেমাগে ৪ উইকেট আর হাসারঙ্গা তুলে নেন ৩ উইকেট। ৬৬ রানের সাথে ৯ উইকেট তুলে নিয়ে টুর্ণামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার তুলে নেন হাসারাঙ্গা। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরষ্কার নিয়ে রাজাপাক্ষ্সের প্রতিদ্বন্দী কেউ ছিলেন না।
টুর্নামেন্টে শ্রীলংকার এই জাগরণ ছিল তাদের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশকে হারানোর মধ্য দিয়ে। তুমুল প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ এই ম্যাচে জয়ের মধ্য দিয়ে বিপুল আত্মবিশ্বাস লাভ করে শ্রীলংকা। সেটি এমনই যে প্রথম ম্যাচে আফগানিস্থানের সাথে শোচনীয়ভাবে হারলেও সুপারফোরে আফগানিস্থানের বড় স্কোরও পেরিয়ে যায় তারা।
এরপর পাকিস্থানকে দুইবার এবং ভারতকে একবার হারিয়ে শেষ পর্যন্ত শিরোপা ঘরে তুলে নিল শ্রীলংকা। শোচনীয় আর্থিক অবস্থায় থেকে যেখানে নিজের দেশে এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারেনি তারা সেখানে এই আত্মবিশ্বাসী সাফল্য তাদের দেশের জন্য অনেক বড় পাওনা।