ক্রিকেট t-20 বিশ্বকাপের পরপরই দলে ৬টি পরিবর্তন আনেন নির্বাচকরা। পাকিস্থানের বিরুদ্ধে টি–২০ ম্যাচে কেমন করে বাংলাদেশ সেটা নিয়ে অনেকের ঔৎসুক্য ছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত দলের পারফরমেন্সের ধারাবাহিকতায় কোন ছেদ পড়েনি! ক্রমশ: নিম্নগামী পারফরমেন্সের পুনরাবৃত্তি দেখিয়ে প্রথম ম্যাচে হেরেছে বাংলাদেশ।
অবশ্য ক্রিকেট ম্যাচটি একতরফা ছিল এমনটি বলারও সুযোগ নেই। কিন্তু প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ১২৭ রানের ছোট পুঁজিতে আটকা পড়লে t-20 ক্রিকেট ম্যাচে বেশি একটা আশাবাদী হওয়ার সুযোগ নেই। সেই ছোট সঞ্চয় নিয়েও খেলা শেষ ওভারে নিয়ে যাওয়াটা প্রাপ্তির খাতায় কিছুটা উল্লেখযোগ্য অর্জন বলেই ধরে নেয়া যায়।
টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নেন অধিনায়ক মাহুমুদুল্লাহ রিয়াদ। পিচ দেখে মনে হয়েছিল ব্যাটিং উপযোগী। তবে খেলা শুরুরপর মনে হয়েছে এখানে বোলাররাও সাহায্য পাচ্ছেন–ম্যাচ শেষে এরকমই ছিল অধিনায়কের মূল্যায়ন।
পাকিস্থানের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আনকোরা অপেনিং জুটির উপর বড় কিছু কেউই আশা করেননি। তবে ভাল কিছু হয়েও যেতেপারে এরকম আশা নিয়ে যারা খেলা দেখেছেন তাদের জন্য এই ম্যাচটা আশাব্যন্জক কিছু ছিল না।
অপেনারদের মধ্যে নাইম শেখ মোটামুটি নিজের একটি জায়গা করে নিয়েছেন ইতিমধ্যেই। বিশ্বকাপেও মোটামুটি রান পেয়েছিলেন নাইম।কিন্তু আজ দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই বিদায় নেন তিনি। নিজে ৩ বলেকরেছেন ১ রান। দলের রান ছিল মাত্র ৩।উইকেট দিয়েছেন বিশ্বকাপ ফাইনালে ম্যাথ্যুওয়েডের ক্যাচ ফেলে ভীষণ হতাশায় নিমজ্জিত পাকিস্থানী বোলার হাসান আলীর বলে।
এই ম্যাচে নিজেকে কিছুটা ফিরে পাবার লড়াইয়ে ছিলেন হাসান আলী। অনেকেই বলছেন বিশ্বকাপের সেই ক্যাচ ফেলার স্মৃতি সারা জীবনই তাড়িয়ে বেড়াবে হাসান আলীকে। তবে সেই দু:সহ স্মৃতিকে পিছনে ফেলে ক্যারিয়ারকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য হাসান আলীর প্রাণান্ত প্রচেষ্টা থাকবে এই সিরিজে এটা ধরেই নেয়া যায়। প্রথম ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়ে কিছুটা সাফল্য পেয়েছেন হাসান আলী এটা ধরেই নেয়া যায়।
বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে দেখা গেল এর বিপরীতচিত্র। বিশ্বকাপে ভয়াবহ ব্যর্থতার পর ঘরের মাঠে নিজেদের প্রথম ম্যাচে যেখানে ঘুরে দাঁড়ানোটা বড় বেশি দরকার সেখানেই ফ্রন্টলাইন ব্যাটাররা ধ্বসে পড়লেন। প্রথম তিন ব্যাটারের সম্মিলিত অবদান ৯। অর্থাৎ তিনজনে মিলেও ডবল ফিগারে পৌঁছাতে ব্যর্থ!
মিডলঅর্ডারে অবশ্য আফিফ হোসেন ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন। অধিনায়ক রিয়াদের সঙ্গে ২৫ রানের একটি জুটি গড়ে। সেটা এমনই একসময় এসেছিল যখন ১৫ রানে৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল বাংলাদেশ!
৩৪ বলে ৩৬ রান করেছেন আফিফ। দুটি করে চার–ছক্কা সমেত। ৩০ এর ঘরে আরেকটি স্কোর আছে। সেটা অলরাউন্ডার মেহেদী হাসানের। শেষদিকে ২২ বলে দুটি ছক্কা ও একটি বাউন্ডারির মারে ৩০ রানে অপরাজিত ছিলেন মেহদী। এর আগে উইকেটরক্ষক নুরুল ইসলাম সোহান ২২ বলে ২৮ রানের আরেকটি প্রায় তিরিশ রানের একটি ইনিংস উপহার দেন। কোন চার নেই তার ইনিংসে। তবে দুটি ছক্কা মেরেছেন সোহান। T-20 ক্রিকেট ম্যাচে বিগ হিট বাপাওয়ার হিট করতে পারেন না বাংলাদেশের ব্যাটাররা– এই অভিধা থেকে উত্তরণের পথেই হাঁটছে বাংলাদেশএটা যে কেউই বলবেন।
প্রথম T-20 ক্রিকেট ম্যাচে ১২৭ রানের টার্গেটে নেমে পাকিস্থানের সূচনাটা ভাল হলেও দুই উদ্বোধনী ব্যাটার আগে–ভাগে আউট হয়ে যাওয়াতে বেশ বিপদেই পড়েছিল পাকিস্থান। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের ভরসা শুরুর দিকের ব্যাটাররাই। প্রথম তিন ব্যাটার বিশ্বকাপে অনেক এগিয়ে দিয়েছিলেন তাদের। আজ ২২ রানের মধ্যেই মুস্তাফিজ ও তাসকিন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন রিজওয়ান ও বাবরকে। তাই বাংলাদেশের জন্য বড় একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল।
তবে পাকিস্থানের তিনত্রয়ীর আরেকজন ফখর জামান দাঁড়িয়েগিয়েছিলেন কোনমতে। যদিও মিডল অর্ডারে হায়দার আলী এবং শোয়েব মালিক শুন্যরানে বিদায় নিয়ে পাকিস্থানকে ভীষণচাপে ফেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু ফখর খুশদিলের সাথে ৫৬ রানের একটি পার্টনারশীপ গড়ে পরিস্থিতি সামাল দেন।
আরও পড়ুন: ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশ
প্রথম ক্রিকেট ম্যাচে দলে পাঁচজন বোলার থাকলেও লেগ স্পিনার বিপ্লবকে বোলিংয়ে আনেননি অধিনায়ক রিয়াদ। যেহেতু পরীক্ষা–নিরীক্ষার মধ্যে দিয়েই যাচ্ছে দল সেহেতু তাকে সুযোগ দেয়াটা দরকার ছিল। ম্যাচে বাংলাদেশের পরাজয় অবধারিত হয়ে যাওয়ার পর অবশ্য তাকে সুযোগ দেয়া হয়েছিল ম্যাচের শেষ ওভারে।
এই ক্রিকেট ম্যাচে অবশ্য এর আগে ১৬ ওভার পর্যন্ত ম্যাচে ভালভাবেই ছিল বাংলাদেশ। পাকিস্থানের জয়ের জন্য ওভার প্রতি ১০রানের কাছাকাছি ছিল টার্গেট। কিন্তু শেষদিকে মুস্তাফিজ ও শরীফুল দুটিব্যয়বহুল ওভার বল করে বাংলাদেশকে ছিটকে দেন ম্যাচ থেকে।এই দুইজনের শেষ দুই ওভার থেকে পাকিস্থান নিয়েছে ৩০ রান। তাই অনেকটা জয়ের কাছাকাছি গিয়েও আরও সামান্য কিছু রান না করতে পারার আক্ষেপে পুড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। কারণ, টি–২০ ক্রিকেটে ১২৭ রান করে মাঝে মাঝে জেতা যায়। সবসময় নয়!