ব্রাজিলের ছন্দময় ফুটবলে বিপর্যস্ত সুইজারল্যান্ড

ব্রাজিল

ব্রাজিল নেমেছিল ফুটবলে তাদের রাজসিক ছন্দ নিয়েই। প্রতিপক্ষ সুইজারল্যান্ডের কৌশল ছিল রক্ষণাত্মক। কোনমতেই গোল করতে দেয়া যাবে না ব্রাজিল কে।

নেইমার নেই। কিন্তু মাঠে নেইমারের অভাব অনুভূত হয়নি তেমন একটা। ছোট ছোট পাসের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের সীমায় বল আটকে রেখেছিলেন বেশির ভাগ সময়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডের রক্ষণব্যুহ ভেদ করা সম্ভব হয়নি ম্যাচের ৮২ মিনিট সময় পর্যন্ত। এটা হয়তো খেলা শেষে স্কোর লাইন দেখে কোন নিরপেক্ষ দর্শকের মূল্যায়ন।

দ্বিতীয়ার্ধের প্রথমভাগেই অবশ্য সুইজারল্যান্ডের জালে বল পাঠান ব্রাজিলের জুনিয়র। দৃষ্টিনন্দন এই গোল শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায় অফসাইড চেকের ফাঁদে পড়ে। মাঠে রেফারী কিংবা লাইন্সম্যান কেউই মনে করেননি এটা ছিল অফসাইড।

৮২ মিনিটে প্রতিপক্ষের ডি বক্সের ভিতরে বল পেয়ে যান ক্যাসিমেরো। আগের ম্যাচে মেক্সিকোর বিপক্ষে যে জায়গা থেকে আর্জেন্টিনার হয়ে মেসি গোল করেছিলেন, অনেকটা সেরকম কোনাকুনি শটে সুইজারল্যান্ডের গোলরক্ষককে পরাভূত করেন ক্যাসিমেরো।

  সুইজারল্যান্ডের কৌশল ছিল গোল না খাওয়ার। পাল্টা আক্রমণ থেকে কোন ক্রমে গোল করে ব্রাজিলকে ভড়কে দেয়া। ম্যাচের বেশিরভাগ সময়ই অবশ্য তাদের এই কৌশল ব্রাজিলকে আটকে রাখতে সক্ষম হয়েছিল।

ব্রাজিলের অবশ্য আরও বেশি গোল না পাওয়াটা ছিলে নিছকই দুর্ভাগ্য। প্রতিপক্ষের সীমানায় অসংখ্য আক্রমণ করেও লক্ষ্যভেদ করাটা সম্ভব হচ্ছিল না ব্রাজিলের ফরোয়ার্ডদের জন্য। নেইমারের অনুপস্থিতে রিজার্ভ বেঞ্চ ঝালিয়ে নেয়ার একটা সুযোগ আসে ব্রাজিলের কোচের জন্য। যদিও এক্ষেত্রে পুরোপুরি ব্যর্থ বলার সুযোগ নেই কোচের কৌশলকে।

যদিও খেলার স্কোরলাইন বলছে ব্রাজিলের জয় একমাত্র গোলে। এটা সহজেই আরও বড় করা সম্ভব ছিল ব্রাজিলের পক্ষে। কিন্তু সুইজারল্যান্ডের রক্ষণভাগের দৃঢ়তায় স্কোরলাইন বড় করা সম্ভব হয়নি ব্রাজিলের পক্ষে।

৮২ মিনিটে ব্রাজিলের হয়ে একমাত্র সফলতা নিয়ে আসেন ক্যাসিমেরো। ইংল্যান্ডের  ম্যানচেঞ্চার ইউনাইটেডের এই তারকা বুলেট গতির শটে পরাভূত করেন সুইশ গোলরক্ষককে। তার এই অবিস্মরণীয় গোলেই গ্রুপ পর্যায়ের প্রথম দুই ম্যাচ থেকেই পূর্ণ পয়েন্ট নিতে পেরেছে ব্রাজিল। এক ম্যাচ বাকি রেখেই উত্তীর্ণ হয়েছে বিশ্বকাপের নক আউট পর্বেও।

আরও পড়ুন: শ্রীলংকায় চার জাতি কাপেও ব্যর্থ বাংলাদেশ : ফুটবলে উন্নতির কোন ছাপ নেই

ম্যাচের পুরো সময়ই খেলার নিয়ন্ত্রণ ছিল ব্রাজিলের হাতে। যদিও সুইজারল্যান্ডও পাল্টা আক্রমনে কিছু সুযোগ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু গোল আদায় করে নিতে পারেনি তারাও।

ভিআইপি গ্যালারিটে বসে খেলা উপভোগ করেছেন ব্রাজিলের সাবেক গ্রেট খেলোয়াড়রা। টিভি পর্দায় বার বার দেখানো হচ্ছিল তাদের। বিশেষ করে সাবেক তারকা খেলোয়াড় রোনাল্ডোকে কয়েকবার দেখা গেছে টিভি স্ক্রিণে।

ম্যাচের ধারাভাষ্যকার এবং ম্যাচ পরবর্তী ইংল্যান্ডের এসটিভির বিশ্লেষকরা ব্রাজিলের খেলার ভুঁয়সী প্রশংসা করেছেন। তাদের মতে, আজকের ফর্ম ধরে রাখতে পারলে ব্রাজিলকে নিয়ে ভবিষ্যদ্বানী করা যায়।

তাদের মতে, নেইমারের অনুপস্থিতে আজকে সুযোগ এসেছিল ব্রাজিলের রিজার্ভ বেঞ্চের খেলোয়াড়দের পরীক্ষা করে নেয়ার। খেলোয়াড় পরিবর্তনেও কোচ মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। ম্যাচের ১৫ মিনিটের মাথায় বদলী খেলোয়াড় নামিয়ে ব্রাজিলের আক্রমনে ধার বাড়ান।

এই ম্যাচে জয়ের মাধ্যমে বিশ্বকাপে সুইজারল্যান্ডকে প্রথমবারের মত হারাতে সক্ষম হল ব্রাজিল। এর আগে দুইবারের মোকাবেলায় কেউই জেতে নি।

আরও পড়ুন: সাফ মহিলা ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

পক্ষান্তরে, ১৯৮০ সালের পর এই প্রথম সুইজারল্যান্ড ব্রাজিলের জালে বল পাঠাতে ব্যর্থ হল। বিগত ৬টি মোকাবেলায় প্রতিটি ম্যাচেই একটি করে গোল করেছে সুইজারল্যান্ড।

ব্রাজিল অবশ্য আরেকটি রেকর্ডের মালিক হয়েছে। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১৭টি ম্যাচে অপরাজিত থাকার অবিস্মরণীয় রেকর্ড গড়েছে তারা। 

Related posts

Leave a Comment