ভারতকে হতাশায় ডুবাল নিউজিল্যান্ড
ভারতকে হতাশায় ডুবতে হল আবারও! প্রথম ম্যাচে পাকিস্থানের কাছে প্রথমবারের মত ১০ উইকেটের লজ্জাজনক পরাজয়। দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটে হার। অনেকটা নি:শর্ত আত্মসমর্পন। চলতি টি–২০ বিশ্বকাপে ভারতের হতাশা আরও প্রলম্বিত হল!
আইপিএলের সুবাদে টি–২০ ক্রিকেটে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রায় প্রত্যেক ক্রিকেটারই ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ টিমের হয়ে খেলেন। অনুমতি না থাকায় কিংবা নিষেধাজ্ঞার কারনে শুধু পাকিস্থানের ক্রিকেটাররা খেলতে পারেন না আইপিএলে। বাকি সবকয়টি ক্রিকেট খেলুড়ে দেশের সেরা খেলোয়াড়দের যাবতীয়বৃত্তান্ত ভারতের নখদর্পনে।
এবারেরটি–২০ বিশ্বকাপের স্বাগতিকদেশ ভারত। যদিও খেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভারতের তত্বাবধানে দুবাই, আবুধাবী আর শারজাহর মাঠে।বিশ্বকাপের সবকয়টি দেশই যেখানে খেলে ফেলেছে তিনটি করে ম্যাচ, সেখানে রোববার ছিল ভারতের দ্বিতীয় ম্যাচ। আয়োজক দেশ হবার সুবাদে ফিকচারে কিছু বাড়তি সুবিধা নেয়ার সুযোগ ছিল। তবে এতসব সুযোগ কাজে লাগিয়েও ভারতের কুফা কাটছে না।
প্রথমম্যাচে পাকিস্থানের সাথে টেনে টুনে দেড়শ রান করেছিলেন ভারতের বাঘা বাঘা ব্যাটাররা। সেটা পাকিস্থান অতিক্রম করেছিল অনায়াসে, বিনা উইকেটে। দ্বিতীয়ম্যাচে টসে জিতে নিউজিল্যান্ড ভারতকে পাঠায় ব্যাটিংয়ে। হয়ত তারা হোমওয়ার্ক করে রেখেছিল এই পরিকল্পনাতেই। যা কাজে লাগিয়েছে শতভাগ।
অপরদিকে নিউজিল্যান্ডের পরিকল্পনায় ব্যাঘাত করার জন্য ভারত দলে কিছুটা পরিবর্তন এনেছিল। আগের ম্যাচের একাদশ থেকে বাদ পড়েন সূর্যকুমার যাদব এবং যুজবেন্দ্র চাহাল। তার পরিবর্তে ব্যাটিংয়ে আসেন ইষাণ কিষাণ ওপেনিংয়ে।যদিও রোহিত শর্মা কিংবা কোহেলী ওপেনিংয়ে থাকেন ভারতের সেরা পছন্দে। আজ নিউজিল্যান্ডের বোলারদের ছন্দ ভন্ডুল করেদিতে যে পরিকল্পনা সাজায় ভারত তা বুমেরাং হয়ে যায় নিজেদের জন্য।
আরও পড়ুন:টি-২০ বিশ্বকাপের নতুন চ্যাম্পিয়ন অষ্ট্রেলিয়া
লোকেশ রাহুলের সাথে ওপেন করতে নামেন ইষান কিষান। ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে আজ তিনি আউট হয়েছেন সবচেয়ে কম বল খেলে।৮ বলে এর অর্ধেকসংখ্যক রানে তিনি যখনপ্যাভিলিয়নে ফিরেন দলের রান তখন ১১। সেটাও পাওয়ারপ্লের প্রথম তিন ওভার শেষহবার একবল আগে। অর্থাৎ নিউজিল্যান্ডের বোলাররা কীভাবে চেপে ধরেছিলেন ইনিংসের একদম শুরুতে তা এই পরিসংখ্যান থেকেই পরিষ্কার।
সেইচাপ থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারেননি ভারতের লম্বা ব্যাটিং লাইনআপের টপ অর্ডারের কেউই।১৪ বলে সমান সংখ্যকরান করায় রোহিতের ষ্ট্রাইকরেট ১০০। শুধুমাত্র লোকেশরাহুল কিছুটা টি–২০ সুলভষ্ট্রাইক রেটে (১১২.৫০) ১৬বলে করেছেন ১৮। বিরাট কোহেলী, রিষভ প্যান্ট আর হার্দিক পান্ডিয়া সবার ষ্ট্রাইক রেট তিন অংকের নীচে!
বাউন্ডারি ছাড়াই বিরাট কোহেলী করেছেন ১৭ বলে ৯, রিষভ প্যান্ট ১৯ বলে ১২। একটানা ৭১ বলে কোন বাউন্ডারি মারতে পারেননি ভারতীয় মিডল অর্ডারের ব্যাটাররা।আউট হবার আগে হার্দিক পান্ডিয়া মেরেছিলেন একটি চার তার ২৪ বলে ২৩ রানের ইনিংসে। সাত নাম্বারে ব্যাটকরতে নেমে রবীন্দ্র জাদেজা ইনিংসের শেষ দিকে মেরেছিলেন একটি ছক্কা আর দুটি চার।সেই সুবাদের ভারতের ইনিংস কোনমতে একশ পেরোয়!
নিখুত পরিকল্পনায় নিউজিল্যান্ডের খেলা সময়ের সাথে নিজেদের অনুকুলে ছিল শেষ পর্যন্ত।একবারও মনে হয়নি ভারত জিতবে। অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ফিল্ডিং কিংবা বোলিংয়ে যেখন যে পরিবর্তন এনেছেন সবই ছিল শতভাগকার্যকর। মিশেল স্যান্টনার ছাড়া উইকেট পেয়েছেন নিউজিল্যান্ডের বাকি চার বোলারই।তবে মিশেল তার চার ওভারে রান দিয়েছেন মাত্র ১৫।
ট্রেন্টবোল্ট পেয়েছেন ২০ রান খরচায় ৩ উইকেট। টিম সাউদি আর এডাম মিলনে ১ উইকেট করে পেয়েছেন ২৬ ও ৩০ রান খরচায়। তবে চমকে দিয়েছেন স্পিনার এশ সোধী। ভারতের ব্যাটাররা স্পিনে সিদ্ধহস্ত হলেও আজ সোধীকেই খেলতে পারেননি। চার ওভারে ১৭ রান দিয়ে সোধী পেয়েছেন রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহেলীর মূল্যবান উইকেট। নিউজিল্যান্ডের জয়ে অনেকের অবদান থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাই সোধীই পান ম্যান অবদ্যা ম্যাচ পুরষ্কার।
নেলসন নাম্বার বা ১১১ রানের টার্গেট টি–২০তে এমনবড় কিছু নয়। তাই নিউজিল্যান্ডের ব্যাটাররা ধীরে সুস্থে খেলে ১৪.৩ ওভার পর্যন্ত ব্যাট করেছেন। অবশ্য খেলা জলদি শেষ করার জন্য ওপেনার মিশেল হয়তো একটা তাড়ায় ছিলেন।না হলে ৪৯ রানে থাকা অবস্থায় বুমরাকে উড়িয়ে মারার কোন কারন খুঁজে পাওয়া যায় না। একটি সিঙ্গেলস নিয়েই যেখানে হাফ সেঞ্চুরী করতে পারতেন। তবে ব্যাক্তিগত রেকর্ডের তুলনায় তারা দলের স্বার্থকেই সব সময় বড় করে দেখেন। এজন্যই নিউজিল্যান্ডকে বলা হয় সেমিফাইনালের দল। কারন এ পর্যন্ত বেশিরভাগ বিশ্বকাপেই সেমিফাইনালে কোয়ালিফাই করেছে তারা।