সাফ মহিলা ফুটবলে অবশেষে চ্যাম্পিয়নশীপ লাভ করেছে বাংলাদেশ। নেপালের দশরথ ষ্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ৩-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা লাভ করেছে বাঘিনীরা।ইটিপূর্বে একবার রানার্স আপ হলেও সেরা হতে পারার গৌরব এবাই প্রথমবারের মত লাভ করেছে বাংলাদেশের প্রমিলা দলটি।
কর্দমাক্ত মাঠে সাফ মহিলা ফুটবল প্রতিযোগিতায় এই ফাইনালে তুমুল প্রতিদ্বন্দিতায় লিপ্ত ছিল দুই দলই। লীগ পর্বের সবগুলো ম্যাচে প্রতিপক্ষ দলগুলোকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে উন্নীত হয় বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে শক্তিশালী ভারতকে পরাভূত করার মাধ্যমে শিরোপা লাভের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছিল দলটি।
ফাইনালে বাংলাদেশ ফেভারিট ছিল অনেকাংশে। তবুও শিরোপা নির্ধারনী ম্যাচে স্নায়ুচাপকে জয় করে স্বাভাবিক খেলা প্রদর্শন করাটা অনেক বড় দলগুলোর জন্যও কঠিন হয়ে যায়। তাই ফুটবলপ্রেমী বাংলাদেশীদের কৌতুহল ছিল এই ম্যাচকে ঘিরে।
সাফ মহিলা ফুটবল প্রতিযোগিতায় স্বাগতিক নেপাল দলটিও শক্তির বিচারে বাংলাদেশের সাথে তেমন একটা পিছিয়ে ছিল না। নিজেদের মাঠে অনুষ্ঠিত ফাইনালে তারা অবশ্যই শক্ত প্রতিদ্বন্দী ছিল। কিন্তু এবারের বাংলাদেশ দলটি ছিল শক্ত ধাতে গড়া। দীর্ঘ্যদিনের প্রস্তুতিতে দলটি সুসংহত ছিল। একটি টিম হিসাবেই খেলেছে বাংলাদেশের মহিলা দলটি। সেজন্যই সেরা হিসাবে প্রমাণ করতে পেরেছে নিজেদের।
খেলার ১৪ মিনিটে প্রথম গোল পায় বাংলাদেশ। শামসুন্নাহারের গোলে এগিয়ে তারা। গ্যালারী ভর্ত্তি দর্শকদের স্তব্ধ করে দিয়ে ৪১ মিনিটে ব্যবধান বাড়িয়ে নেন কৃষ্ণা (২-০)। প্রথমার্ধের খেলায় বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল ২ গোলের ব্যবধানে।
বিরতির পর ম্যাচে ফিরে আসার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে নেপাল। বদলি খেলোয়াড় হিসাবে মাঠে নামানো হয় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত সাবিত্রাকে। এর সুফলও পায় তারা। সাবিত্রা/আনিতা মিলে বাংলাদেশের রক্ষণভাগে বেশ চাপ সৃষ্টি করেন। ৬৯ মিনিটে গোল পেয়ে যায় নেপাল। অনিতা প্লেসিং শটে বাংলাদেশের গোলরক্ষককে পরাভূত করেন (১-২)।
গ্যালারীতে নড়েচড়ে বসেন নেপালের সমর্থকরা। মনে হচ্ছিল নেপাল ফিরে আসবে সহসাই। কিন্তু গোল পরিশোধে মরিয়া নেপালের জালে আরেকটি গোল জড়িয়ে বাংলাদেশকে পরিষ্কার ব্যবধানে এগিয়ে দেন কৃষ্ণা (৩-১)। নেপালের খেলোয়াড়দের মনোবল ভেঙ্গে যায় এখানেই।
আরও পড়ুন: শ্রীলংকায় চার জাতি কাপেও ব্যর্থ বাংলাদেশ : ফুটবলে উন্নতির কোন ছাপ নেই
এরপর বলের দখল নিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে অবশ্য চেষ্টা করেছিল নেপালিজ প্রমীলারা। কিন্তু বাংলাদেশের রক্ষণব্যুহ ভেদ করা আর সম্ভব হয়নি তাদের পক্ষে। বারবার আক্রমণে গিয়েও খেই হারিয়েছেন তারা। পক্ষান্তরে, বাংলাদেশের গোলকীপার ছিলেন খুবই তৎপর। বেশ কয়েকটি আক্রমণ নস্যাৎ করে দিয়েছেন তিনি।
পিচ্ছিল এবং কর্দমাক্ত মাঠে অবশ্য শেষদিকে বল ক্লিয়ার করাটা অনেক কঠিন ছিল। সর্বশক্তি দিয়ে শট নিয়েও বল অনেকবার মাঠের বাইরে পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছেন দুই দলের খেলোয়াড়রাই।
নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষ হওয়ার পর অতিরিক্ত ৪ মিনিট ইনজুরি টাইম বাড়িয়ে দেয়া হয়। এসময় নেপালিরা গোল পরিশোধে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর ভাগ্যের শিকে ছিড়েনি!
বাংলাদেশের দলটি কোচ গোলাম রব্বাণীর অক্লান্ত পরিশ্রমে দীর্ঘ্যদিনের সাধনায় এ পর্যন্ত উঠে এসেছে। খেলোয়াড়দের ফিটনেস লেভেল খুবই ভাল। দলটির অন্যতম সেরা খেলোয়াড় সাবিনা এবার টুর্ণামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার লাভ করেছেন। টুর্নামেন্টে ৮ গোল করে তিনিই সর্বোচ্চ গোলদাতা।
ফাইনালে দারুণ প্রতিরোধ গড়ে তোলা গোলকীপার রুপনা চাকমা গোলরক্ষণে পেয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা হওয়ার সম্মান। ৫ ম্যাচ খেলে একমাত্র গোলটি তিনি হজম করেছেন ফাইনাল ম্যাচে।
এবারের সাফ মহিলা ফুটবল প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। মহিলা দলের এই সাফল্যে বাংলাদেশের পুরুষ দলটি সাফল্যের অনুপ্রেরণা পায় কীনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।